রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ভারসাম্য দরকার

মাহবুব আহমেদ, সাবেক সিনিয়র সচিব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ভারসাম্য দরকার

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর প্রাক্তন বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ বলেছেন, আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও প্রবৃদ্ধিকে অবহেলা করা যাবে না। মূল্যস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধি এ দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রেখে বাজেট প্রণয়নে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কেমন বাজেট হওয়া উচিত-এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুব আহমেদ বলেন, বিশ্ব একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অস্থিরতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক-উভয় দিক থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনেও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ, ঝড়বৃষ্টি বেড়েছে। বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাজেট হচ্ছে। বাজেটের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সাবেক এই অর্থ সচিব বলেন, মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য, ডলারের বিনিময় হার, সুদের হার, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এমনকি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতেও চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে এবার। এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকারকে এমন একটি বাজেট দিতে হবে যা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমাবে। কারণ ২০৪১ সালে আমরা যেখানে যেতে চাইছি, সেখানে যেতে হলে এ বৈষম্য নিরসন জরুরি।

মাহবুব আহমেদ বলেন, বিভিন্ন বিষয় দেখে বোঝা যাচ্ছে, সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার এবার মূল্যস্ফীতি। এ কারণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিময় হার, সুদের হার নির্ধারণেও দ্রব্যমূল্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করছে বলে মনে হচ্ছে। এ কারণে বাজেটের আকার ছোট হতে পারে এবার। তবে বাজেটের আকার ছোট করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা আমি মনে করি না। কারণ আমাদের প্রবৃদ্ধিরও দরকার আছে। প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একসময় শুধু প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছি, সুষম বণ্টনের বিষয়টিতে অবহেলা করেছি। এখন যদি শুধু মূল্যস্ফীতির দিকে নজর দিই, প্রবৃদ্ধিকে অবহেলা করি, সেটা কিন্তু অদূর ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। কর্মসংস্থানে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা দারিদ্র্য বিমোচন বাধাগ্রস্ত করবে। বাজেটের সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে কম রাজস্ব আদায়কে চিহ্নিত করে সাবেক এই অর্থ সচিব আরও বলেন, বাজেটের আকার আরও বড় হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয়ের হার কম বলে এটি সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য রাজস্ব খাতে সরকারকে আর মনোযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনেক ধরনের সংস্কার করতে হবে। কর অবকাশ সুবিধার সংস্কার দরকার। এটি কমাতে হবে। আইএমএফ এ বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছে। তাদের সব কথা যে শুনতে হবে, এমন নয়। তবে ভালো বিষয়গুলো গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে কর অবকাশ সুবিধা কমিয়ে আনা একটি। এ ছাড়া রাজস্ব বোর্ডে প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক সংস্কারেও সরকারকে নজর দেওয়া উচিত। এসব সংস্কারের মাধ্যমে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বাড়ানো যাবে। বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এডিবির সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধির বাইরে গিয়ে দক্ষতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নজর দিতে হবে। এজন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন এবং এ বছরের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর