রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরবানির আগেই বেড়েছে মসলার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

ডলারের দাম বাড়ায় কোরবানির আগেই বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম। কোরবানির ঈদের বাকি প্রায় এক মাস। এর মধ্যেই মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে এলাচের দাম বাড়ছে লাফিয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ও হলুদের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। সাধারণত কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। এ ছাড়া ডলারের দাম ৭ টাকা বেড়ে যাওয়ার পরপরই রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে আমদানি করা মসলার পাইকারি দাম বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী এমন চিত্র দেখা যায়। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, মসলার বাজারের বড় অংশ হলো আমদানিনির্ভর। হঠাৎ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আমদানিকারক বলেন, মূলত এলসি সমস্যার কারণেই দামটা বেড়েছে। অনেকেই এলসি কমিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ডলারের দামও হঠাৎ বেড়ে গেল। এখন এলসি করতে ১২৮ টাকায় ডলার মিলছে না। যার প্রভাব রয়েছে। আবার এ সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী মসলা মজুদ করে বেশি মুনাফা করছে। পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারে বড় দানার ভালোমানের প্রতি কেজি এলাচ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই এলাচের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। ছোট দানার প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহে একই মানের এলাচ ৩ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে লবঙ্গের দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। একই লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৫৬০ টাকায়, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে যে গোলমরিচ প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এখন তা ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দারুচিনি ৫০০-৫৫০ টাকা, হলুদ ৩১০ টাকা, কালোজিরা ৩২০ টাকা, কিশমিশ ৮০০ টাকা, তেজপাতা ১৪০ টাকা, কাজুবাদাম ১২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা অনুযায়ী এক বছর আগে (গত বছর এদিনে) দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। খুচরা বাজারে বড় আকারের প্রতি কেজি এলাচ ৪ হাজার ২০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি তালিকা অনুযায়ী, গতকাল আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ২১০-২৪০ টাকায়। গত বছর এ সময় তা বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকায়। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়, গত বছর এ সময়ে তা ছিল ৪৯০-৫২০ টাকা। এ ছাড়া টিসিবির তালিকা অনুযায়ী বাজারে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ধনে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। শুকনা মরিচ ৪২০ থেকে ৫০০ টাকায়।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় এক সপ্তাহ হলো, এর মধ্যে সব ধরনের মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মসলা আমদানি করতে হলে আগে এলসি খুলতে হয়। তারপর শিপমেন্ট হয়। তারপর বাজারে আসে। বাজারে এখন যেসব মসলা আছে এগুলো বহু আগের আনা মসলা। এসব মসলা ডলারের বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে পণ্য মূল্যের দাম বাড়ছে।

চট্টগ্রাম : গত বছরের অক্টোবরে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪ হাজার টাকার ঘরে ঠেকেছে। লবঙ্গের দাম মাঝে কিছুটা কমলেও বর্তমানে আবার ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লবঙ্গের দাম কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে মানভেদে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭০৫ টাকা। একইভাবে ৭৫০ টাকার গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দারুচিনি, হলুদ, কালোজিরা, তেজপাতা, মরিচসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্যের।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের দেওয়া তথ্য মতে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পর্যাপ্ত মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। কোরবানির আগে সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে আমদানি করা মসলাজাতীয় পণ্য দ্রুত খালাস করে দেওয়া হচ্ছে কাস্টমস থেকে। আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে ভারত থেকে জিরা এবং এলাচ; ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম এবং গুয়েতেমালা থেকে লবঙ্গ, দারুচিনি এবং অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্য এসেছে। সর্বশেষ পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৪ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন এলাচ, ৪১ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন জিরা, ৩২ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন লবঙ্গ এবং ২৯ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন গোল মরিচ আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি।

চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, ‘মসলার বাজার সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। দাম নির্ভর করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকটসহ একাধিক বিষয়ের ওপর। তার দাবি, রপ্তানিকারক দেশেও মসলার দাম বেড়েছে। ফলে দেশের মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী।’

সর্বশেষ খবর