সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই

এস এম মান্নান কচি, সভাপতি বিজিএমইএ

শাহেদ আলী ইরশাদ

ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেছেন, আমরা ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই। পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতাগুলো জরুরি ভিত্তিতে নিরসন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক রপ্তানি বাড়াতে কাস্টমস, বন্ড, বন্দর ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতাগুলো জরুরি ভিত্তিতে নিরসন করা প্রয়োজন। রপ্তানি বাড়াতে উৎসে কর ১% হতে ০.৫০% করা; নগদ সহায়তার আয়কর ১০% থেকে ৫% করা; বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা; অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির ওপর কর রেয়াত; এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটার ওপর আয়কর ২০% থেকে ১০% করা  দরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার বিষয়গুলো বিবেচনা করবে বলে আশা করছি। এস এম মান্নান কচি বলেন, আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিলকে আরও সেবা ও শিল্পবান্ধব করা, পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোকে বিশেষ নীতি সহায়তা ও অর্থায়ন সুবিধার আওতায় আনা, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও টেকনোলজি আপগ্রেডের মাধ্যমে ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনা, শিল্পকে বহুমুখী করা, যাতে অল্প কিছু পণ্য ও বাজারের মধ্যে আমরা সীমাবদ্ধ না থাকি এবং ইউনিফাইড কোড অব কন্ডাক্ট। বর্তমানে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির যে চাপ রয়েছে তা থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ফুড রেশনিং চালু করা প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার জন্য এক্সিট পলিসি প্রণয়ন এবং ভারতের ন্যায় এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। এস এম মান্নান কচি বলেন, শিল্পাঞ্চলের বাইরে গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। এটি বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করবে। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক কারখানা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে, এখন বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ না দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেইসঙ্গে অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি যেন এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয় এবং শিল্পাঞ্চলের কাজ শেষ হওয়া এবং জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া পর্যন্ত যেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ২০২৬ সালের পর সময়োপযোগী নীতি সহায়তা আনা এবং বাজার সুবিধা ধরে রাখতে সরকার ও বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আর ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রচলিত সব নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। নতুন বাজার, নতুন পণ্য ও নন-কটন টেক্সটাইলে বিনিয়োগ আনার কৌশল নিয়ে কাজ করছি, কারণ আগামীতে এই নতুন খাতগুলো থেকেই আমাদের প্রবৃদ্ধি আসবে। তিনি আরও বলেন, রপ্তানিতে আমরা যে প্রণোদনাগুলো পেয়ে থাকি সেগুলো ২০২৬ সাল নাগাদ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এই সহযোগিতা কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাব, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে, ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, নতুন কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে আমাদের সরাসরি রপ্তানিকারী কারখানার সংখ্যা ৫ হাজার থেকে কমে ২ হাজার ২০০-তে নেমে এসেছে। আমরা যদি কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে পারতাম তাহলে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পেত এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারত। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তবে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত হিসেবে পোশাক খাতের সম্ভাবনা ও সক্ষমতা রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং আরও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করার। বিশ্ববাজারে আমাদের শেয়ার মাত্র ৭.৮৭%। অর্থাৎ আমাদের সামনে সুযোগ অপরিসীম। আগামীতে আমাদের নতুন নতুন ক্ষেত্রে শিল্পের বিকাশের জন্য বিষয়ভিত্তিক নীতি সহায়তা প্রয়োজন, যেমন- নন-কটন পণ্যে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য সহায়তা প্রয়োজন। তেমনি ২০২৬ এর পর আমাদের শিল্পগুলো কীভাবে সরকারের সহায়তা পেতে পারে সেটি আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান সরকার শিল্পবান্ধব সরকার। সরকারের সকল প্রকার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আমাদের তৈরি পোশাক খাত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্পের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, ইনশা আল্লাহ।

সর্বশেষ খবর