শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪-২৫

ঘাটতি সামলানোর টার্গেট

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

মানিক মুনতাসির

চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার অংশ হিসেবে বাজেট ব্যয়ের পরিধি কমিয়ে আনছে সরকার। এতে করে সরকারের বার্ষিক বাজেট ঘাটতিও কমে আসবে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আসছে ২০২৪-২৫ বাজেটে চলতি (২০২৩-২৪) বছরের তুলনায় ঘাটতি বাড়তে পারে ৫ হাজার কোটি টাকার মতো। যা আগের বছর (২০২২-২৩) বেড়েছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদ ও অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনার অন্যতম কৌশল হচ্ছে বাজেট ব্যয়ের লক্ষ্য কমিয়ে আনা। তবে এর চেয়েও উত্তম কৌশল হচ্ছে অপচয় রোধ ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা। অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের বাজেটের সামগ্রিক আকার আগের মতো বাড়ছে না। অবশ্য অনেক দিন আগে থেকেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সংকোচনমুখী বাজেট প্রণয়নের চাপ দিয়ে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধ দল এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দিয়ে গেছে। এদিকে ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তার সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও বাজেট ঘাটতি কমাতে ব্যয়ের খাতে লাগাম টানার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাউস আকারের ঘাটতি নিয়ে বিশাল পরিধির বাজেট না করে সীমিত সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে কার্যকর বাজেট ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলেছেন। সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী এবার সংকোচনমূলক বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। প্রতি বছর সাধারণত বাজেটের আকার ১০-১৩ শতাংশ বাড়ানো হয় কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে চলতি বছরের তুলনায় আগামী ২০২৪-২৫ বাজেটের আকার বাড়তে পারে মাত্র ৫-৮ শতাংশ। আসছে বাজেটে কমানো হবে জিডিপির টার্গেট। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ গত ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ বাজেটের মূল আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ওই বছর বাজেট বেড়েছিল ৮৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ এ বছর বাজেটের আকার বাড়তে পারে মাত্র ৩৫ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে আইএমএফের নির্দেশনা অনুযায়ী বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতিও কমে আসবে বলে আশা করছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, মূলত রাজস্ব আহরণ কম হওয়া, আমদানি ও রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া এবং বাজেট বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক না হওয়ায় আসছে বাজেটটিকে কিছুটা সংকোচনমুখী করা হবে। তবে উন্নয়ন কর্মকান্ডের অর্থায়নে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

আগামী বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায় লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ে সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা করাটা ইতিবাচক। এতে করে অর্থনীতির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। তবে ব্যয়ের টার্গেট কমিয়ে আনলে আবার কোথাও কোথাও বরাদ্দ কমে যাবে। এতে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য বাজেট ব্যয়ের লক্ষ্য কমানোর চেয়ে অপচয় রোধ ও প্রকল্প ব্যয়ে দুর্নীতির রাশ টেনে ধরাটা বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে তিনি মনে করেন। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে বাজেটে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এই বিশেষজ্ঞ।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর