মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার অনুমতি

কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার অনুমতি

রাজধানীর ডেমরায় গতকাল ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকা সিটিতে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিতে বলেছেন তিনি।

গতকাল তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে এ সম্পর্কে ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বলেছেন, বাজার মনিটরিং যেন জোরালোভাবে হয় এবং ভালোভাবে নজর দিতে বলেছেন। বাজারে পণ্যের সরবরাহ যেন ঠিক থাকে। তিনি বলেন, কিছু কিছু পণ্যের সরবরাহ ঠিক আছে, সংকট না থাকার পরও বাজারে কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সে জন্য কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে আইন-বিধিমালা করে নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অটোরিকশা নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নভাবে পত্রিকায় এসেছে। অটোরিকশা চালকরা নিজেদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এসেছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, অটোরিকশা চালকদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই বিধিমালায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে হবে যে এই এলাকার বাইরে তারা চালাতে পারবে না, এর মধ্যে তাদের চালাতে হবে। মহাসড়কে কিংবা বিজি হাব কিংবা সড়কে তারা অটোরিকশা চালাতে পারবেন না, যেতে পারবেন না। কোন কোন সড়কে চলতে পারবে, কী গতিতে তারা যেতে পারবে, সেটা তিনি বলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই মহাসড়ক কিংবা বড় সড়কে তারা যেতে পারবেন না, সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিমালা যথাযথভাবে সংশোধন কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। মাহবুব হোসেন বলেন, অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন না। বিষয়টি তার নজরে আনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তোমরা আমাকে জানাওনি কেন, তাদের জীবিকার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে তাদের সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আমার সঙ্গে তোমাদের কথা বলা উচিত ছিল। তিনি এভাবেই বলেছেন। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক হয়নি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, যেখানে রিকশা বা অটোরিকশার মেশিন তৈরি হয়, সেখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে রিকশা বা অটোরিকশা ম্যানুয়ালি চলে। এ জন্য মেশিনচালিত রিকশার নকশা অ্যাডজাস্ট করছে না। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, আমাদের ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। একই সঙ্গে মেশিনের সঙ্গে উপযুক্ত একটি কাঠামো সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে একটি মডেল বা কাঠামো তৈরি করে দ্রুত নিয়ে আসেন। যেটা অ্যাক্সিডেন্ট প্রবণতাকে কমাতে ভূমিকা রাখবে, তিনি সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।

মন্ত্রিসভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি পদক নীতিমালা-২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ১ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ৯৫ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন। এটা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ বছরের ১৭ এপ্রিল আইনের খসড়া উঠেছিল। তখন নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছিল। এবার চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। আইনের আওতায় বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা যে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন সেটি ছিল ১৯৮৩ সালের। আমাদের উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক শাসনামলের যেসব আইন ছিল সেগুলো পরিবর্তনের যে নির্দেশনা আছে তার আলোকে এ আইনটি করা হয়েছে। মাহবুব হোসেন বলেন, আইনে মূলত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে আইনটি ছিল মূলত সেই আইনকে অনুসরণ করা হয়েছে। সেটি হলো যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতাদি পাবেন এবং নির্বাচন কমিশনার হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতাদি পাবেন। তারা উৎসব ভাতা পাবেন, বাংলা নববর্ষের ভাতা পাবেন, আবাসন সুবিধা পাবেন, যানবাহন সুবিধা পাবেন, টেলিফোন সুবিধা, কুক ভাতা, সিকিউরিটি ভাতা পাবেন। নিয়ামক ভাতা পাবেন ৮ হাজার টাকা করে। চিকিৎসা সুবিধা আগে যেভাবে আছে সেটাই থাকবে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ডি-এইট দেশগুলোর মধ্যে কোনো ইস্যুতে আপত্তি থাকলে তা নিষ্পত্তির জন্য তৈরি করা ‘প্রোটোকল টু দ্য ডি-এইট পিটিএ অন ডিসপ্যুট সেটেলমেন্ট মেকানিজম’-এর খসড়ায় বাংলাদেশের স্বাক্ষর করার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।

ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর ১২৬টি দেশে যেতে সনদ সত্যায়নের জটিলতা কাটাতে একটি কনভেনশনের আওতায় যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানান, অ্যাপোস্টাইল কনভেনশন-১৯৬১ এ বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এই কনভেনশনের সদস্য ১২৬টি দেশ। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্ররা বা কোনো ব্যক্তি যখন বিদেশে যান তখন অনেক ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করতে হয়। শিক্ষাসংক্রান্ত সনদ হলে প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হয়। এরপর যে দেশে যাবে সেই দেশের দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয়, এরপর তা ওই দেশে কার্যকর হয়। তিনি বলেন, যেসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, দিল্লিতে গিয়ে ওইসব দেশের দূতাবাসে সনদ জমা দিয়ে সত্যায়িত করতে হয়, এতে বিরাট জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী সত্যায়িত করে দিলে এরপর আর ওই দেশের দূতাবাসে গিয়ে সত্যায়িত করতে হয় না। তিনি আরও বলেন, এই কনভেনশনে বাংলাদেশ এতদিন সদস্য না থাকায় আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মন্ত্রিসভা খুবই ইতিবাচকভাবে এটি গ্রহণ করেছে। এতে স্বাক্ষর করলে ইউরোপ-আমেরিকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন যে ভোগান্তি হয় সেটি আর হবে না এবং ব্যয় সাশ্রয় হবে।

সর্বশেষ খবর