শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজস্ব বোর্ড অটোমেশন জরুরি

আশরাফ আহমেদ, সভাপতি ডিসিসিআই

শাহেদ আলী ইরশাদ

রাজস্ব বোর্ড অটোমেশন জরুরি

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, ব্যবসা সহজ করার জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অটোমেশন। অটোমেশনকে শতভাগ কার্যকর এবং আরও সহজ করা জরুরি প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

আশরাফ আহমেদ বলেন, মূসকের ক্ষেত্রে রিফান্ড ও আপিল প্রক্রিয়া এখনো অটোমেশনের আওতায় আসেনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটা বাস্তবায়ন করতে হবে। কাস্টমস ব্যবস্থাপনা সহজীকরণের লক্ষ্যে অতি দ্রুত বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডোকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এনবিআর যখন অটোমেশন চালু করে, শুরুর দিকে বেশ জটিল ছিল। যা দিনে দিনে সহজ হচ্ছে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে, অটোমেটেড প্রসেসের মধ্যে ম্যানুয়াল কোনো বিষয় যেন না থাকে।

তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের উদ্যোগ দেখতে চাই। প্রথাগতভাবে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর বেশি নির্ভর করে। তবে আগামী অর্থবছর ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করলে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। কারণ ব্যাংকগুলো এমনিতেই তারল্য ঘাটতিতে রয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারি ঋণ যদি অনেকাংশে বেড়ে যায়, তখন এ ঘাটতি আরও বড় আকার ধারণ করবে। যা বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে চাপ ফেলতে পারে বলে আমরা মনে করি। এ কারণেই ঘাটতি বাজেট মেটাতে দুটো বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, পুঁজিবাজার আর দ্বিতীয়ত, সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিপিপি মডেলের আওতায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো। এর ফলে বিশেষ করে অবকাঠামো খাতের বৃহৎ প্রকল্পসমূহে বাজেট বরাদ্দের বাইরের অর্থায়ন সম্ভব হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, আগামী বাজেটের তিনটি চ্যালেঞ্জ হবে। প্রথমত, করহার না বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির প্রবণতা ধরে রাখা। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব ব্যয় সংকোচন করে উন্নয়নমুখী বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়ানো এবং তৃতীয়ত, বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর চাপ না ফেলে বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন করা। আমরা মনে করি বিদ্যমান অর্থনীতির এই রূপান্তরের সময়ে যে বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা উচিত সেগুলো হলো রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনার সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পায়ন ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, অটোমেশন, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। আশরাফ আহমেদ বলেন, এনবিআরের তথ্যমতে, আদায়কৃত মোট করের প্রায় ৬০ শতাংশই কয়েক হাজার করদাতার। তার মানে বাকি যে লাখ লাখ করাদাতা রয়েছেন, তারা নিজেদের আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে কর দেন না, অথবা তাদের আয় প্রকৃতভাবে প্রদর্শিত হয় না। এর ফলে আমরা যখন করহার বাড়াচ্ছি বা কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করছি, তখন পরিলক্ষিত হয় যে, যারা কর দিচ্ছেন তাদের ওপরই করের বোঝা বাড়ছে। আমরা মনে করি, এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে খুব বেশি সাফল্য আসবে না। তাই এনবিআরকে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর আরও বেশি নজর দিতে হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটি করনীতি ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন। এই ইউনিটটি কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও কর আদায়ের পদ্ধতি, অথবা কোন খাত থেকে কী পরিমাণ কর আদায় করা সম্ভব হবে, সেই বিষয়ে আমাদের শিল্পনীতি ও বাণিজ্যনীতির সঙ্গে মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। এ ধরনের কর ইউনিট ঢাকা চেম্বারসহ বাণিজ্য সংগঠনের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি জরুরি। করনীতি ইউনিটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কীভাবে নতুন ধরনের শিল্প ও সেবা খাত তৈরি করা যায়, যেগুলো থেকে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, সেমিকন্ডাক্টর একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। যেটিকে এখনই প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা প্রদান করা না হলে খাতটি আশানুরূপভাবে সম্প্রসারিত হবে না। কিন্তু আমরা যদি খাতটির বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিতে সক্ষম হই, তবে সামনের দিনগুলোতে এটি রাজস্ব আহরণের একটি বৃহৎ উৎস হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

 

সর্বশেষ খবর