বুধবার, ২২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোটের মধ্যেই জয় পরাজয় নিয়ে বিতর্ক

ভারতে লোকসভা নির্বাচন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল মঙ্গলবার বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের প্রত্যেকটা দফার শেষে এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে এবং বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতা দখলের দিকে এগোচ্ছে। একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন থেকে কেজরিওয়াল এই দাবি করে বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোট দেশকে একটি মজবুত এবং স্থিতিশীল সরকার উপহার দেবে।’ অন্যদিকে ভারতের নির্বাচনকুশলী প্রশান্ত কুমার (পিকে) বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে তার মনে হচ্ছে বিজেপি-ই আবার ক্ষমতায় আসছে। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট’ (এনডিএ) সরকার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই। পাশাপাশি চলমান লোকসভা নির্বাচনে বিকল্প সরকার গঠনের জোরালো দাবিও নেই। স্বাভাবিকভাবেই মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসছে।

লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে পাঁচ দফার ভোটে ৪২৮ আসনে ভোট নেওয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও দুই দফার ভোট। পরবর্তী ধাপে ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা আগামী ৪ জুন।

মঙ্গলবার আলাদা আলাদাভাবে সর্বভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে টিভি এবং এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘জন সুরাজ পার্টি’র প্রধান প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফের একবার দলকে জয়ের পথ দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করে আসছেন বিজেপি ৩৭০টা আসনে জয় পাবে এবং এনডিএ ৪০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা পেরোবে। কিন্তু আমি বলেছি এটা সম্ভব নয়। বিজেপি কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য এই স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। ৩৭০ আসনের জয় পাওয়াটা বিজেপির পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু এটাও নিশ্চিত যে বিজেপি ২৭০ আসনের নিচে কখনোই থাকবে না। আমি বিশ্বাস করি গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে যে ৩০০ আসনে জয় পেয়েছিল, এবার বিজেপির আসন সংখ্যা তার কাছাকাছি কিংবা সেই সংখ্যার থেকে কয়েকটি আসন বাড়তে পারে।’

এর স্বপক্ষে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী ৩০৩টি আসনের মধ্যে ২৫০ আসন এসেছিল উত্তর এবং পশ্চিম ভারত থেকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এবার ওই অঞ্চল থেকে আসন কম পাচ্ছে কি না। পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে বর্তমানে বিজেপির প্রায় ৫০টি আসন রয়েছে। এই অঞ্চলে এবার আসন সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে সম্মিলিতভাবে পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে ১৫-২০ আসন বাড়তে পারে। আবার উত্তর ও পশ্চিম ভারতেও যে বিজেপির খুব খারাপ ফল হবে, তাও বলা যাচ্ছে না।

পিকে জানান, আসন সংখ্যা দূরে সরিয়ে রেখে, আমাদের মৌলিক বিষয়গুলো দেখা উচিত। আমাদের বিবেচনা করা উচিত যে এই সরকারের পরাজয় ঘটছে কি না। যদি ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দেয়, বা যদি বিকল্প সরকারের সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে মানুষ তাদের ভোট দিয়ে উৎখাত করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু বিজেপি কিংবা মোদিজির ১০ বছরের শাসনকালে নিশ্চয়ই সমাজের একটা বড় সংখ্যক মানুষের ভিতর হতাশা, অপূর্ণ আকাক্সক্ষা থাকতে পারে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা শুনিনি যে মোদিজির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ আছে। চলমান লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে এনডিএ জোট। বিজেপির একার লক্ষ্যমাত্রা ৩৭০ আসনে জয়। এ ব্যাপারে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর জানান, যদি বিজেপি ২৭৫ আসনে জয়লাভ করে, তবে তাদের নেতারা নিশ্চয়ই বলবেন না যে আমরা ৩৭০-এর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছিলাম, তাই আমরা সরকার গঠন করব না। আমাদের দেখা দরকার বিজেপি ম্যাজিক ফিগার ২৭২ আসনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারছে কি না। তবে এই বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি আর বিতর্ক চলতেই থাকবে। যারা কমেন্ট্রি করছে তারাও করতে থাকবে। কিন্তু আমি কোনো ঝুঁকি দেখছি না। এবং এনডিএ ফের ক্ষমতায় ফিরে আসছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর