শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থা চাই

মো. মাহবুবুল আলম, সভাপতি এফবিসিসিআই

শাহেদ আলী ইরশাদ

ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থা চাই

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূর করতে হবে। ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মতো আগামী বাজেট প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার দরকার।

মাহবুবুল আলম বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং সিএমএসএমইকে শুল্ক করের যৌক্তিক প্রতিরক্ষণ দরকার। ক্ষেত্র বিশেষে অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। ভোগ্যপণ্যসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি করনীতি, কর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, অটোমেশন ও ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে কর জাল সম্প্রসারণ করতে হবে। স্বেচ্ছায় কর প্রতিপালন হার বৃদ্ধি করে রাজস্ব আদায় তথা কর জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি; আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। যথাযথ করনীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা, সমন্বিত শুল্ক-কর এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার লক্ষ্যে সুদহার স্থিতিশীল রাখতে হবে। বিনিয়োগের স্বার্থেই সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। বৈদেশিক অর্থায়নে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন হবে। রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিদেশে দক্ষ জনসম্পদ প্রেরণ করতে পারলে ভালো এবং টেকসই রেমিট্যান্স মিলবে। দক্ষ জনবলের পাঠানো রেমিট্যান্স অধিকতর মূল্য সংযোজন করতে সক্ষম। সম্ভাবনাময় এবং নতুন জনশক্তি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, রাজস্ব বাড়াতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদার করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, সহায়ক নীতি সহায়তা, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ এবং করের আওতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করতে হবে। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিকল্প সহায়তা হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পরিবহন খাতে প্রণোদনা বা বিশেষ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, করহার কমিয়ে আয়কর এবং মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে আয়করের আওতা বাড়ানো। সক্ষম করাদাতাদেরকে আয়করের আওতায় আনতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জরুরি সংস্কারক আবশ্যক। আমদানি পণ্যের যথাযথ শুল্কায়ন, পণ্য খালাস এবং সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ত্বরান্বিত করার জন্য বিদ্যমান এসাইকুডা সিস্টেমের সার্বিক উন্নয়নসহ বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়নের সময়সীমা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রাজস্ব বোর্ড জাতীয় রাজস্ব পরিচালিত হলেও ট্যাক্স ভ্যাট এবং কাস্টমস এই তিনটি শাখার মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না থাকায় এই তিন শাখার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য অটোমেটেড ও ইন্টিগ্রেটেড রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। আমদানিকৃত কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার করা দরকার। কেননা আগাম কর ভ্যাটও না, আবার আয়করও না।

মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য সামগ্রী যেমন- চাল, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনি, সব ধরনের ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে ২% হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। যার কারণে ভোগ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। তাই সব কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতা বহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে মূসক নিবন্ধনকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার। প্রতি মাসে রিটার্ন দাখিল করে প্রায় ৩ লাখ। এর বাইরে সারা দেশের সক্ষম সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মার্কেট সমিতির সহায়তায় বাধ্যতামূলক মূসক নিবন্ধনের আওতায় আনলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। এ ছাড়াও কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি ব্যবহৃত হয় এমন তৈরি পণ্যের সর্বোচ্চ স্তর ২৫% ক্রমান্বয়ে ২০৩০ এর মধ্যে যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের ক্ষেত্রে শুল্ক ৫%-৭% করা দরকার। যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না এমন কাঁচামাল ক্ষেত্রে শুল্ক ১%-৩% করা দরকার। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত পণ্যের ওপর পরিমাণভিত্তিক মিশ্র শুল্ক তালিকাভুক্ত পণ্য যেমন- খাদ্যশস্য, যানবাহন, লৌহ ও ইস্পাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বর্ণ ইত্যাদি নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহবুবুল আলম।

সর্বশেষ খবর