শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

প্রয়োজন সরকারের বিশেষ সহযোগিতা

কামরান টি. ওহমান

শাহেদ আলী ইরশাদ

প্রয়োজন সরকারের বিশেষ সহযোগিতা

মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি. রহমান বলেছেন, কভিড-পরবর্তী অবস্থা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আগামী বাজেটে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

কামরান টি. রহমান বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য কিছু সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। সেই হিসাবে আগামী বাজেট একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট হিসেবেও গণ্য হবে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে বাজেট ব্যবস্থাপনা গতিশীল ও স্বচ্ছ হলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজস্ব প্রদান করবে। তিনি বলেন, বিগত অর্থবছরে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রায় সব ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায়,  হ্রাসকৃত কোম্পানি করহার সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছে না। অর্থ আইন, ২০২৩ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলির প্রযোজ্যতার কারণে হ্রাসকৃত কর হার সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি ৮০ শতাংশের অধিক অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি। এই অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির মাধ্যমেই বাংলাদেশের শিল্পব্যবস্থা ক্রমশ অগ্রসরমান। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় কর হারের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২৩-এর শর্তাবলি বাতিল করা দরকার। অপর পক্ষে বাংলাদেশে কার্যকরী করপোরেট কর হার অনেক বেশি। এখানে অননুমোদিত ব্যয় এবং উৎসে কর কর্তন এত বেশি যে, ব্যবসায়ীরা এই করপোরেট করহারের কমানোর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বাস্তবে এই করপোরেট কর হার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ আর থাকে না। এটি ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। এই বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে।  এমসিসিআইর সভাপতি বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানিগুলো মাসিক ভ্যাট রিটার্ন প্রদান করে থাকে। তবে এই ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে অটোমেশন নয়। ই-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এই অটোমেশন ব্যবস্থা গতিশীল হবে বলে এমসিসিআই মনে করে। এ ছাড়াও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব উপাদানকেই পণ্য বা সেবার উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে আইনের ধারা পরিবর্তন সাপেক্ষে রেয়াত ব্যবস্থার অটোমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে গতিশীল হবে।  আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী বর্তমানে ২৬৪ ধারা অনুযায়ী ৪৩টি ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমাদানের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক পিএসআর দাখিলের বিধান ব্যবসার সক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগকে ব্যাহত করছে। পিএসআর সংগ্রহকারীর পক্ষে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা জটিল হচ্ছে। পক্ষান্তরে আয়কর আইন বহির্ভূতভাবে, অনেক সময়  পিএসআরের তথ্যাবলি ছাড়াও করদাতাদের আয়ের বিবরণ, কর প্রদানের পরিমাণ সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্যাবলি সংগ্রহ করা যৌক্তিকও নয়। তাছাড়াও রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা থাকা সত্ত্বেও হালনাগাদকৃত  পিএসআর দাখিলের বিধান সাংঘর্ষিক ও বাস্তবসম্মত নয় বলে পরিলক্ষিত হয়। তিনি আরও বলেন, আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ২১২(৪) এর দফা (আ) তে ৬ (ছয়) বছরের অধিককাল পর্যন্ত পরিসম্পদ ওই ছয় বছর বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। বাস্তব অবস্থায় ছয় বছর আগের সময়ের হিসাব অনেকাংশে সংরক্ষণ করা খুবই দুরূহ। ছয় বছরের অধিককালের কোনোরূপ সীমারেখা না রেখে প্রণীত আইন বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। এমসিসিআই আগের আইনের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নতুন আয়কর আইন, ২০২৩ এ বিধানটি প্রবর্তন করা দরকার। তিনি বলেন, অর্থ আইন ২০২৩ অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওই ফান্ডের জন্য কোনোরূপ কর আরোপের বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সীমারেখা আইনগতভাবে দৃষ্টিকটু। কামরান টি রহমান বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পণ্যের বিনিময় মূল্যকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে ডাটাবেজ মূল্য বা রেকর্ড মূল্যকে শুল্কায়নের মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক বাজারের হালনাগাদ তথ্যের ডাটাবেজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইবের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অটোমেশন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের ৪০ লাখ জনশক্তি যাদের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছর এবং যারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত নয়। এই বৃহৎ জনশক্তিকে শ্রমবাজারে নিয়ে আসা খুবই জরুরি। এই বৃহৎ জনশক্তিকে যদি দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে আমাদের জিডিপির ওপর অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় শিল্পের বিকাশ খুবই জরুরি। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাগণ স্থানীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আয়কর হার, মূসক ব্যবস্থাপনা, শিল্প যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির শুল্কহার, সম্পূরক শুল্কহার যথাযথভাবে বিবেচনা করে স্থানীয় শিল্প সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর