শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আগুনে পুড়ছে ঘর আশ্রয়হীন মানুষ

♦ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়েছে ৫০০ ঘর, খোলা আকাশের নিচে ৪ হাজার মানুষ ♦ গাজীপুরে কলোনিতে আগুন পুড়েছে ৮৮ বসতঘর ♦ টাঙ্গাইলের সখীপুরে আগুনে পুড়ল পেট্রলপাম্পসহ ১১ দোকান ♦ রাজধানীর শান্তিনগরে আবাসিক ভবনে আগুন

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশজুড়ে চলছে দাবদাহ। প্রচ- গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যেই ঘটছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। একের পর এক অগ্নিকান্ডে পুড়ছে ঘর, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে মানুষ।

গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়েছে প্রায় ৫০০ ঘর। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ৪ হাজার মানুষ। একই দিন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নিম্নআয়ের মানুষের একটি কলোনিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে গেছে ৮৮টি বসতঘর। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে এসব ঘরের বাসিন্দারা। টাঙ্গাইলের সখীপুরে অগ্নিকান্ডে পুড়েছে পেট্রলপাম্প, একটি কাপড়ের দোকান, তিনটি মনোহারি, একটি রড-সিমেন্টের ও কসমেটিক্সসহ ১১টি দোকান। এ ছাড়া রাজধানীর শান্তিনগরে ১২ তলা একটি আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকান্ড ঘটেছে। সব জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। কোথাও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ কারিতাস অফিসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পুড়ে গেছে ক্যাম্পের ২১০টি শেল্টার ও ৪৫টি দোকান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২০টি ঘর। গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৪ হাজার মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি টিম দেড় ঘণ্টা লড়াই করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তীব্র গরমের মধ্যে মানুষের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন থাইংখালী ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারিতাসের শেল্টার অফিসে হঠাৎ অগ্নিকান্ডের সূচনা হয়। কারিতাস অফিসে আগুন ধরলে চারদিকে ছোটাছুটি শুরু হয়। মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় পাওয়া ছোট্ট ঘরটাতে তিলে তিলে যেসব জিনিসপত্র সঞ্চয় করেছে, সেগুলো বাঁচাতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায় তারা। খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে। একে একে যোগ দেয় তাদের ৮টি ইউনিট। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুনের লেলিহান শিখা। কিন্তু তার আগেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাজারো রোহিঙ্গার স্বপ্ন। ৪ হাজার রোহিঙ্গা এখন খোলা আকাশের নিচে শেল্টারহীন। এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করি। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। যেখানে ২ শতাধিক শেল্টার পুড়ে গেছে। ক্যাম্প থেকে পাওয়া ইন্সিডেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্যাম্পের আগুনে ৪৩০টি শেল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজীপুরে কলোনিতে আগুন : আমাদের গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি  জানান, গতকাল দুপুর সোয় ১টার দিকে জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকের তেলিরচালা এলাকার একটি কলোনিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই কলোনির ৮৮টি বসতঘর পুড়ে গেছে। কলোনির বাসিন্দা গার্মেন্ট শ্রমিক লতিফ জানান, এখানে স্থানীয়দের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে সারোয়ার ও সুফিয়ানসহ কয়েকজন ব্যক্তি ঘর তুলে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার নিম্নআয়ের মানুষদের কাছে ভাড়া দিয়েছিলেন। সারোয়ারের কলোনিতে প্রথমে আগুন লাগে। এরপর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস এসে নিয়ন্ত্রণের আগে আগুনে সারোয়ারের বাড়ির ২০টি কক্ষ, রায়হানের ১৯টি কক্ষ, নাজিম উদ্দিনের ২০টি কক্ষ, সুফিয়ানের ২০টি কক্ষ, শফিকের ৯টি কক্ষসহ কলোনির পাঁচটি বাড়ির ৮৮টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ্ আল আরেফিন জানান, দুপুর সোয় ১টায় কলোনিতে আগুন লাগার খবর পাই। কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ও কোনাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর সোয়া ২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।

আগুনে পড়েছে পেট্রলপাম্পসহ ১১ দোকান : আমাদের সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, গতকাল সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সখীপুরের ইন্দারজানি বাজারে আগুনে পুড়েছে পেট্রলপাম্পসহ ১১ দোকান। সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পেট্রলপাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, সন্ধ্যার একটু আগে ইউসুফ মিয়ার পেট্রলের দোকানে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও ১০টি দোকান পুড়ে গেছে। একটি কাপড়ের দোকান, তিনটি মনোহারি দোকান, একটি রড-সিমেন্টের দোকান ও কসমেটিক্স দোকানসহ ১১টি দোকান পুড়ে গেছে। ধারণা করা করা হচ্ছে- প্রায় ৩ কোটি টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আগুন লাগার সংবাদ শুনে স্থানীয় সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু, ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেনসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

শান্তিনগরে আবাসিক ভবনে আগুন : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল রাজধানীর শান্তিনগরে ১২ তলা একটি আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকান্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দুটি ইউনিট প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

সর্বশেষ খবর