গতকাল ছিল দ্রোহ, প্রেম, মানবতার কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা, নাচ, গান, নাটকসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপন করেছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ফুলের চাদরে ঢাকা সমাধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধি ফুলের চাদরে ঢেকে দেয় ভক্ত অনুরাগীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ভোর সোয়া ৬টায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, কপিরাইট অফিস, শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তারা। বিএনপি ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির দুই নাতনি খিলখিল কাজী, মিষ্টি কাজী। এ সময় কবি পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান স্বাধীনতা ও স্বাধিকার সংগ্রামে আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গানটি যেন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের পরে গাওয়া হয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারকে এই দাবি জানানোর পাশাপাশি কবির জন্মদিনটিকে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণার দাবিও জানান কবি নাতনি খিলখিল কাজী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নজরুলের বিপ্লবের গান, বিদ্রোহর গান আমাদের প্রাণিত করেছে, আজও উদ্বুদ্ধ করে।
সমাধিতে আরও শ্রদ্ধা জানায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, সিপিবি, বাসদ, ডেমোক্রেটিক পার্টি ও ১০ দলীয় জোট, সমাজতান্ত্রিক মহিলা দল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সুরসপ্তক, ধূমকেতু- আন্তর্জাতিক নজরুল একাডেমি, বাফা, জলতরঙ্গসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ছায়ানট : নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে ছায়ানট ভবনের ছায়ানট মিলনায়তনে চলছে তিন দিনের নজরুল উৎসব। গতকাল ছিল এই উৎসবের দ্বিতীয় দিন। একক, দলীয় গান, নৃত্য, পাঠ ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো ছিল এদিনের আসর। অনুষ্ঠানে গীতিনৃত্যালেখ্য ‘সজল শ্যাম ঘন দেয়া’ আয়োজনে শুরুতে পাঠে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। ‘এসো হে সজল শ্যামল ঘন দেয়া’ শিরোনামের দলীয় গান গেয়ে শোনান ছায়ানটের বড়দের দল। একক নৃত্য পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা তাথৈ, দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ছায়ানটের বড়দের দল।
‘বরষা ওই এলো বরষা’ একক গান গেয়ে শোনান কানিজ হুসনা আহম্মদী সিম্পী, মনীষ সরকার গেয়ে শোনান ‘মেঘ-মেদুর বরষায় কোথা তুমি’, নাহিয়ান দুরদানা শুচি গেয়ে শোনান ‘রিম ঝিম রিম ঝিম ঝিম’,‘রুম ঝুম বাদল আজি বরষে’ গেয়ে শোনান শারমিন সাথী ইসলাম ময়না, ‘সোনার হিন্দোলে কিশোর’ গাইলেন মাকসুদুর রহমান মোহিত খান, ‘কেন কাঁদে পরান’ গাইলেন জয়িতা অর্পা, ‘ভুল করে যদি ভালোবেসে থাকি’ ‘পেয়ে কেন নাহি পাই’ গাইলেন লতিফুন জুলিও, ‘গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙে যায়’ গেয়ে শোনান বিটু কুমার শীল। এ ছাড়া একক গানে অংশ নেন সঞ্জয় কবিরাজ, নাশিদ কামাল, শুভ কর্মকার, শামিমা পারভীন শিমু, মৃদুলা সমদ্দার, আফসানা রুনা, কল্পনা আনাম।
জাদুঘর : জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে শুরু হয়েছে তিন দিনের নজরুল উৎসব। গতকাল বিকালে জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে শুরু হওয়া এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
শিল্পকলা একাডেমি : আলোচনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উদযাপন করেছে শিল্পকলা একাডেমি।
সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের আলোচনা-পর্বে মুখ্য আলোচক ছিলেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান।
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শুরুতে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যশিল্পী দল। গীতিআলেখ্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংগীত দল। একক সংগীত পরিবেশন করেন ছন্দা চক্রবর্তী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সুজিত মোস্তফা, রাজিয়া মুন্নি, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, শারমীন সাথী ইসলাম ময়না।
কুমিল্লায় নানা আয়োজন : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লায় নানা আয়োজন করা হয়। গতকাল বিকালে নগরীর চর্থায় শচীন দেব বর্মণের বাড়িতে বেলুন উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. শাহেদ। আরও বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাহমিদা মোস্তফা।
এদিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৌলতপুরে কবির ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের কবি নজরুল মিলনায়তনে নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। দুটি অনুষ্ঠানে বক্তারা নজরুল স্মৃতি রক্ষার দাবি জানান। উল্লেখ্য, কবি নজরুলের স্ত্রী নার্গিস ও প্রমীলার বাড়ি কুমিল্লায়।