রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিউইয়র্কে শুরু চার দিনের বইমেলা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

প্রবাস প্রজন্মে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির কল্পধরা সুরক্ষার অঙ্গীকারে ‘যত বই তত প্রাণ’ স্লোগানে শুক্রবার শুরু হয়েছে চার দিনের নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। মেলা উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি বিশ্বব্রহ্মান্ডের এক  মর্মমূলে, আমাদের পরিচয় আমরা মানুষ, আমরা বাঙালি। আমরা যে বাংলা ভাষাকে এখন পাচ্ছি, তা হাজার বছর ধরে লিখিত আকারে বিবর্তিত হয়ে এসেছে উচ্চারিতভাবে, প্রামাণ্যভাবে; আর আমাদের যে ইন্টেঞ্জিবল কালচারের হ্যারিটেজ অপরিমেয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য, যা প্রথম উপকরণ ভাষা, যে ভাষার নাম আমাদের জন্য বাংলা ভাষা, তা বিবর্তিত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই আমাদের জাতিসত্তা, আমাদের ব্যক্তিসত্তা, আমাদের ধ্বনিসত্তা বিবর্তিত হয়েছে। তারই চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা, তিনি যখন বললেন-এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।

কবি নুরুল হুদা বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি সারা পৃথিবীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে। আমরা বলছি যত বই তত প্রাণ, যত বই তত শব্দ, যত শব্দ তত ধ্বনি, যত ধ্বনি তত অর্থ। এসব নিয়ে বাঙালিরা যাত্রা করেছে হাজার বছর আগে নয়, প্রায় ৬-৭ হাজার বছর আগে যেদিন বাংলা ভাষায় ‘স্থান’ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে। বলা যেতে পারে এশিয়া মহাদেশের মধ্যস্থানে কিরগিস্থানের পাশে কাজাখস্থান, তার পাশে জানবেন স্থানের অনেক প্রকারভেদ। এ স্থান সাতবার বিশদভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বলে বাংলা ভাষার ইতিহাস-পরিবার বলে। স্থান যুক্ত না থাকলেও দুটি রাষ্ট্রের কথা বলব। তা হচ্ছে ইরাক ও ইরান। ইরাকের অপর নাম পারস্যস্থান। পারস্যস্থানের পর যেখানে আসবেন সেখানে দেখবেন ‘স্থান’ বিশেষভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। আফগানিস্থান, তারপর বেলুচিস্থান, তারপর যাকে দক্ষিণ এশিয়া বলছি-হিন্দুস্থান, তারপর এসেছে আমাদের বাংলাদেশ। এভাবেই বাংলা ভাষা পরিবার ৭ হাজার বছর ধরে বিবর্তিত হচ্ছে।

উদ্বোধনী পর্বে সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাঙালির যাপিত জীবনের ফল্গুধারা প্রবাসের প্রজন্মে প্রবাহিত রাখার সংকল্পে নিউইয়র্কের মুক্তধারা এরকম অনুষ্ঠানটি ৩৩ বছর ধরে করছে। প্রথম প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে একইসূত্রে বেঁধে রাখার এই প্রয়াস, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই যোগসূত্র আমার দেশ, আমার সংস্কৃতি, আমার বই, আমার সাহিত্য সবকিছুতে। ফরিদা ইয়াসমিন এমপি বলেন, অনেকে মনে করেন, নতুন প্রজন্ম হয়তো দেশের সংস্কৃতি থেকে পিছিয়ে পড়ছে অথবা দূরে সরে যাচ্ছে। এই ভাবনা ঠিক নয়। প্রকৃত অর্থে তারা সরে যাচ্ছে না। এই বইমেলার উপস্থিতি তাদের কথা বলে দিচ্ছে।  শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আরেফিন সিদ্দিকী, ফরিদুর রেজা সাগর (কথাসাহিত্যিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই), সৌমিত্র শেখর দে (উপাচার্য, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রমুখ। ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরই মিলনায়তনের ভিতরে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রপ্রদর্শনী পর্বেরও উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। তিনি বলেন, একাত্তরে পাক হায়েনাদের হত্যাযজ্ঞের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো মেলেনি। তাহলে বিশ্ব শান্তির যে অঙ্গীকার জাতিসংঘসহ বিশ্ব ফোরামে উচ্চারিত হচ্ছে তার বাস্তবায়ন ঘটবে কীভাবে। তিনি আমেরিকা প্রবাসীদের বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এ ধরনের সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান। এ সময় তার পাশে ছিলেন সারা যাকের (ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা)।  জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে অতিথিদের মেলা কমিটির পক্ষ থেকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়ার পর ৩৩ বছরের ধারাক্রমে ৩৩ জন অতিথি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে চার দিনের অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এ সময় স্বাগত ভাষণ দেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. নুরুন্নবী এবং সিইও বিশ্বজিৎ সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেখক-সাংবাদিক শামিম আল আমিন। উদ্বোধনী পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতন, সংগীত পরিষদ, আড্ডা এবং উদীচীর শিল্পীরা।  এ মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখকদের সদ্য প্রকাশিত ১০ হাজার বই নিয়ে ৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর