রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে তোড়জোড়

মানিক মুনতাসির

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ে তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। ডলার সংকট না কমায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। যার ফলে রিজার্ভ ধরে রাখতে এই মুহূর্তে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে সরকার। কিন্তু সংস্থাটির দেওয়া ৩৮টি শর্তের মধ্যে কয়েকটি শর্ত ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে বৈদেশিক  মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার বিষয়ে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। যদিও গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে সরকার ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করেছে। ব্যাংক ঋণ ও আমানতের ঋণের সুদসীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবুও তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে সংস্থাটি। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আইএমএফের বোর্ড সভা সংক্রান্ত তথ্যগুলো সচরাচর সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে। যথারীতি আগামী ২৯ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত সংস্থাটির তিনটি বোর্ড সভা রয়েছে। সেগুলো হলো- ২৯ মে সোমালিয়া ও লুক্সেমবার্গ ইস্যু, ৩১ মে কসোভো ইস্যু এবং ৩ জুন অনুষ্ঠিতব্য আইএমএফের বোর্ড সভায় সেসেলস ও বুলগেরিয়া ইস্যু অনুমোদনের কথা রয়েছে। অথচ এই তিনটি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের কোনো ইস্যু এজেন্ডাভুক্ত হয়নি। এর ফলে অর্থবিভাগ ধারণা করছে, আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাটির সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা হচ্ছে। এদিকে আজ (রবিবার) সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা,  ভুটান) কৃষ্ণমূর্তি ভেনকাতা সুব্রমানিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠকে ঋণের এই কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে পুনঃআলোচনা করা হবে। সরকার প্রত্যাশা করেছিল জুনের আগেই তৃতীয় কিস্তির অর্থ যোগ হবে বাংলাদেশের হিসাবে। আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ বছরের বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে। তার আগে এই অর্থ পাওয়ার প্রত্যাশা করলেও তা পাচ্ছে না সরকার। এ জন্য দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ দ্রুত ছাড়ের বিষয়ে অনুরোধ করবেন অর্থমন্ত্রী।

এর আগে ৮ মে ১৫ দিনের সফর শেষে ঢাকা ছেড়ে যায় আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। দলটি ঢাকায় অবস্থানকালে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে। তখন ঋণের বিপরীতে দেওয়া সংস্থাটির শর্তগুলো পরিপালনের অগ্রগতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে আইএমএফের সদর দফতরে।

সূত্র জানায়, চলতি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিচালনা পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি উঠছে না। তবে দ্রুতই অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক।

আগামী ২৯ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আইএমএফ নির্বাহী পর্ষদের সভায় বিভিন্ন দেশে বর্ধিত ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে সূচি রয়েছে। সেখানে নেই বাংলাদেশের নাম। এদিকে জাতীয় সংসদে ৬ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। এর আগে ঋণের এই কিস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দেয় আইএমএফ। ঋণ অনুমোদনের পরপরই ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় দেয় সংস্থাটি। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে অনুমোদিত ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারও ছাড় দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ পাবে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা কিস্তিতে পূর্ব নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি। অবশ্য ৮ মে ঢাকা ছাড়ার আগে প্রতিনিধি দলটি একটি বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ে অনুমোদনের ইঙ্গিত দিয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর