সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্তেই গলদঘর্ম

বাদ যাবে জিপিএ ও নম্বর পদ্ধতি, সাত স্কেলে হবে মূল্যায়ন- সাত দিনে ফল পাবে শিক্ষার্থীরা - রিপোর্ট কার্ডই হবে পাবলিক পরীক্ষার সনদ

আকতারুজ্জামান

শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন কারিকুলাম চালু করেছে সরকার। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়ন করে বিতরণ করা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ‘ডেসিমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র আওতায় ইতোমধ্যে সরকার ব্যয় করেছে ৭৪৭ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নতুন চালু করা এ কারিকুলামে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতেই গলদঘর্ম হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। দফায় দফায় বৈঠক করা আর প্রস্তাবনা কাটাছেঁড়া করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে এ প্রক্রিয়া। জানা গেছে, প্রক্রিয়াধীন থাকা পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হলে বাদ যাবে বিদ্যমান জিপিএ ও নম্বর পদ্ধতি। এসবের পরিবর্তে সাত স্কেলে (প্রারম্ভিক, বিকাশমান, অনুসন্ধানী, সক্রিয়, অগ্রগামী, অর্জনমুখী ও অনন্য) হবে মূল্যায়ন। অ্যাপের মাধ্যমে মূল্যায়ন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফল পাবে সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে। এ ছাড়া সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এ পরীক্ষা এগিয়ে ডিসেম্বরে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আগামী ২০২৬ সালে নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ এর আলোকে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে নতুন কারিকুলামে পাবলিক পরীক্ষা মূল্যায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান একটি বৈঠকে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ ভাগ ও চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ৫০ ভাগ করার প্রস্তাব করেছিলেন। আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৬০ শতাংশ নম্বর কার্যক্রমভিত্তিক ও ৪০ শতাংশ নম্বর পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষকরা ক্লাসরুমে মূল্যায়ন করছেন না। শিক্ষকদের অনেকে ‘রিয়েল টাইম’ মূল্যায়ন না করে বাড়িতে বসে মূল্যায়ন করছেন। বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যথাযথ মূল্যায়ন দুরূহ হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩৫ ভাগ ও চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ৬৫ ভাগ করার প্রস্তাব এসেছে বলে জানা গেছে।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামে পাবলিক পরীক্ষায় শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পাবলিক মূল্যায়ন- দুটোর জন্য আলাদা আলাদা সাত স্কেলের একটি রিপোর্ট কার্ড থাকবে। এ রিপোর্ট কার্ডই পাবলিক পরীক্ষার সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতাকে গ্রেড বা নম্বরে প্রকাশ করা হবে না। শিখনকালীন মূল্যায়নে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ বিকাশের অবস্থা রিপোর্ট কার্ডে উল্লেখ থাকবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন রেকর্ডের সমন্বয়ে বার্ষিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করা হবে।

পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের পরীক্ষার জন্য একটি কর্মদিবস নির্ধারিত থাকবে। সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার (বিরতিসহ) মধ্যে এ পরীক্ষা শেষ করতে হবে। নৈপুণ্য অ্যাপে ইনপুটের ভিত্তিতে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ পাবলিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করবে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্ট এবং রিপোর্ট কার্ড প্রণয়ন করা হবে। রিপোর্ট কার্ডে বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতার ক্ষেত্র অনুযায়ী শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পাবলিক মূল্যায়নের জন্য আলাদা করে সাতটি স্তরের ভিত্তিতে ফল প্রকাশিত হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, নতুন কারিকুলামে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে শিগগিরই একটি কর্মশালা করা হবে। এরপর এটি চূড়ান্তকরণের জন্য এনসিসিসি সভায় উত্থাপন করা হবে। এরপর তা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে সবাইকে অবগত করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এনসিটিবির লিড কনসালট্যান্ট ড. এম তারিক আহসান বলেন, কোন শিক্ষার্থীর কোন বিষয়ের কোন ক্ষেত্রে, কতটুকু সমস্যা রয়েছে সেটিও উঠে আসবে নতুন কারিকুলামের মূল্যায়নের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এ মূল্যায়ন দেখে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে। জুন মাসের মধ্যে নতুন কারিকুলামের পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর