মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

পেনশন স্কিম নিয়ে অস্থিরতা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণার পর ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এ পেনশন স্কিম বাতিল দাবিতে একযোগে মানববন্ধন করেছে গত রবিবার। আজ মঙ্গলবার সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। পেনশন স্কিম বাতিল দাবিতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এরপরও দাবি মানা না হলে ৪ জুন সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। এর মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা না এলে আন্দোলনের বৃহত্তম কর্মসূচি ঘোষণা করবেন শিক্ষকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর এবার কর্মবিরতির কর্মসূচি দিলেন। এর আগে গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার এবং আগের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। শিক্ষকরা জানান, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধু চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি বাজেটে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। তাই শিক্ষকরা পাঠদান ছেড়ে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন। তিনি বলেন, আরোপিত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের প্রত্যাহার চাই। অন্যথায় শিক্ষকরা বৃহত্তম আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য যে প্রত্যয় স্কিম আরোপ করা হয়েছে, তা তাদের পারিবারিক সুরক্ষা নষ্ট করছে। এ প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলম-বই নিয়েই ক্লাসরুমে থাকতে চান। কিন্তু আরোপিত অন্যায় প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য যে প্রত্যয় স্কিম আরোপ করা হয়েছে তা আমাদের পারিবারিক সুরক্ষা নষ্ট করছে। এই প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট সেক্টর বলেছেন, অথচ সেখানেই আজ সবচেয়ে বেশি কর্তন করা হচ্ছে, শিক্ষা খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা চাই, স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও স্মার্ট দেশ গড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুরক্ষা বলয় নিশ্চিত করতে হবে, এই প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান গতকাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বৈষম্যমূলক। আমরা আশা করব দ্রুত সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে, যেটা আগে কাটা হতো না। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সেটিও সুস্পষ্ট করা হয়নি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ থেকে ৬০ বছর করা হয়েছে। মাসিক চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতাও নতুন প্রত্যয় স্কিমে প্রদান করা হবে না বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অতীত থেকে পেনশন স্কিম পদ্ধতি চালু থাকলেও হঠাৎ নতুন করে সর্বজনীন প্রত্যয় স্কিম চালু করা হয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে না। তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে এটা একটা ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত। অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম বাতিলের দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর