মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ডুবেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারা দেশে হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বেশির ভাগ এলাকা। ডুবে যায় এই দুই নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট। ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। তৈরি হয় গণপরিবহন সংকট। জলাবদ্ধতার কারণে বাসায় আটকা পড়েন চট্টগ্রামের মেয়র। এ ছাড়া প্রবল বৃষ্টির কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে পাহাড়ধসের। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ভোর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার। বৃষ্টির ফলে রাজধানীতে গরম কমলেও ভোগান্তিতে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গতকাল ভোরে কাজে বের হন অনেকে। বেশির ভাগ রাস্তায় গণপরিবহনের খুব একটা দেখা মেলেনি। অনেকে গণপরিবহনের অপেক্ষায় থেকে বৃষ্টিতে ভিজে গেছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করেছেন। দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা থাকায় অটোরিকশা চালকরা যেতে রাজি হননি। রাজধানীর বংশাল, ধোলাইখাল, নিউমার্কেটসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, আগারগাঁও, বাড্ডা, গুলশান, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। রাজধানীর মৌচাক মোড়ে অফিসফেরত আলতাফ হোসেন বলেন, এমন বৃষ্টি হচ্ছে, থামাথামি নেই। পানিতে হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে। তাই ভিজে ভিজে বাসায় যাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানীর একাধিক জায়গায় গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে গেছে। এতে যানচলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন বলেন, রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও কুর্মিটোলা এলাকায় রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়েছে, এমন সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা থেকে গাছ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করে। আরও ফোন আসছে গাছ ভেঙে পড়ার। সেখানে আমাদের টিম যাচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম নগরীর বেশির ভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান। পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। নগরীর অনেক রাস্তায় নৌকায় চলাচল করতে হয়েছে। বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন। বেশি ভোগান্তিতে পড়েন অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী, পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন স্থান, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, কাপাসগোলা ও বাদুরতলা এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। চকবাজার ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা মো. ফয়সাল বলেন, গত রবিবারের বৃষ্টিতেই পানি জমে যায় সড়ক ও বাসার সামনে। গত দুই দিন ধরে পানির কারণে অন্তহীন ভোগান্তির মধ্যে দিন পার করছি।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা এম এইচ এম মোসাদ্দেক বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। আগামী আরও কয়েকদিন এমন বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের আশঙ্কাও আছে।

বাসায় আটকা চসিক মেয়র : টানা বর্ষণে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বহদ্দার হাট এলাকার নিজ বাসভবনে আটকা পড়েন। গতকাল মেয়র বাসা থেকে বের হতে না পারায় নগর ভবনেও যেতে পারেননি। বাসার সামনে জমে থাকা পানি মোটর দিয়ে সড়কে ফেলতে দেখা গেছে। এর আগে গত বছরের বর্ষা মৌসুমেও মেয়রের বাসভবন পানিতে তলিয়ে যায়। জানা যায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ ভৌতিক কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীন নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি স্লুইস গেট, ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ প্রায় শেষ।

পানি নিষ্কাশনে বাধা ৭৫ স্পটের তালিকা ওয়াসাকে হস্তান্তর করল সিডিএ : চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বাধা হিসেবে চিহ্নিত ৭৫টি স্পটের পাইপলাইন সংস্কারের অনুরোধ করে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে তালিকা দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গতকাল দুপুরে সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহর সঙ্গে ওয়াসা ভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এ তালিকা হস্তান্তর করেন। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তালিকা গ্রহণ করে জরুরিভিত্তিতে পাইপলাইনগুলো সংস্কারের আশ্বাস দেন।

আজও বৃষ্টির পূর্বাভাস : আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। বুধবারের পর দেশের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। এ মাসে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। তবে জুনে বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক দফা তাপপ্রবাহ হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশের বেশির ভাগ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর