মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুন্দরবনে ক্ষতির মুখে প্রাণী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত করলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ঢাল হিসেবে বাংলাদেশকে রক্ষা করে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ঠেকিয়ে খুলনা অঞ্চলের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে সুন্দরবন। তবে এমনটি করতে গিয়ে সুন্দরবন এখন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিমালের প্রভাবে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের বন সংরক্ষকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সার্বিকভাবে এ পরিস্থিতিকে বন্যপ্রাণীর জন্য মারাত্মক অবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বনের অভ্যন্তরে যে মিষ্টি পানির পুকুর ছিল তার ৯০ শতাংশই লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বনে কাঠের জেটিগুলোও পানির স্রোতে ভেসে যায়। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়ে তারা বন্যপ্রাণীসহ গোটা সুন্দরবনে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রবিবার সকাল ১০টার পরই সুন্দরবন পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করে। বিকাল নাগাদ বনের বিভিন্ন এলাকা ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। বিশেষ করে কটকা, কাচিখালি, নীলকমল, মান্দারবাড়ি, হলদিবুনিয়া সবচেয়ে বেশি পানির নিচে তলিয়েছে। আর এসব এলাকা হচ্ছে হরিণ, বানর, শূকরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এসব প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। বনের ভিতরে থাকা মিঠা পানির উৎসগুলো নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণী, বনজীবী ও বনকর্মীরা খাবার পানির সংকটে পড়েছে।

বন কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু ‘কিল্লা’ করা হয়েছে। জোয়ারের পানি বাড়লে এসব কিল্লার উঁচু জায়গায় বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নিতে পারে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বন্যপ্রাণীদের এখানে আশ্রয় নেওয়ার কথা। তারা আরও জানান, অন্যান্য ঝড়ে এক দিনেই সাধারণত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু এবার ঝড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে হওয়ায় তারা সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

খুলনার সুন্দরবন বন বিভাগের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রবিবার সকাল ১০টা থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৩০ ঘণ্টা সুন্দরবন টানা পানির নিচে।

যেহেতু বনে এখন পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পানির চাপ আছে এজন্য বনের বিভিন্ন প্রাণী বিশেষ করে বাঘ ও হরিণ শাবকদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে আমরা এ পরিস্থিতিকে বন্যপ্রাণীর জন্য মারাত্মক অবস্থা বলে মনে করছি। এ ছাড়া বনের অভ্যন্তরে যে মিষ্টি পানির পুকুর ছিল তার ৯০ শতাংশই লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। ঝড় থেমে গেলে বন ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সপ্তাহখানেকের মধ্যে বের করতে পারব।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশে ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারায় বন্যপ্রাণীদের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পরিমাপ করা যায়নি। তবে আমাদের দুবলা, আলোর কোল, শ্যালা, কটকা ও কচিখালী ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে। দুবলার চর ও কটকায় কাঠের জেটিগুলো পানির চাপে ভেসে গেছে। বন্যপ্রাণী, মৎস্যজীবী ও বনকর্তাদের পানীয় জলের পুকুরগুলোয় লবণাক্ত পানি ঢুকে গেছে। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন টাওয়ার, বেশ কিছু ভবনের সোলার প্যানেল ও কাচ ভেঙে গেছে।’

সর্বশেষ খবর