বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

মূল্যস্ফীতি প্রধান চ্যালেঞ্জ

এম এম আকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল্যস্ফীতি প্রধান চ্যালেঞ্জ

বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এজন্য আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. এম এম আকাশ বলেন, এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ নতুন করে যদি আরও ভ্যাট বসানো হয় এবং ভর্তুকি কমানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি সুদের হার ও ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি উসকে যাবে। কিন্তু এগুলো না করলে আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। আর সেটা না করা গেলে আইএমএফের ঋণও পাওয়া যাবে না। সুতরাং একদিকে সম্পদের ঘাটতি তৈরি হবে, অন্যদিকে অপ্রিয় সংস্কার না করে উপায় থাকবে না। এসব সংস্কার করা হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ফলে এবারের বাজেটটা একটা ত্রিমুখী সংকটের মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থাকে খুবই সতর্কাভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা তো গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নিজেদের দাবি করি। সেটা হলে যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের বাজেট তার সব শ্রেণির মানুষকে কাভার করে। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবস্থাটাই হলো কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত বাজেট প্রণয়নের নীতিমালার পরিবর্তন করা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এটা গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট হবে না। বাজেটকে আরও অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব শ্রেণির মানুষকে কাভার করা যায় সে অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় বাজেটের সুফল যারা পাওয়ার কথা তারা পাবে না। এখন অবশ্য বাজেটের সুফল সাধারণ মানুষ খুব একটা পায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ অধ্যাপক আরও বলেন, আমরা জানি, বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সংসদে আলোচনা হয়। কিন্তু আমাদের সংসদের ৬২ শতাংশের বেশি সদস্য হলেন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর লোক। আমরা জানি, ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর ক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে কমই ঘটে। এখন এমন একটা পরিস্থিতি ঘটেছে যে, অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিবিদ এবং অসৎ আমলাদের সম্মিলন ঘটেছে। বাজেটে তাদের প্রভাবের কারণে জনগণের প্রভাব কম দেখা যায়। এটা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। যার ফলে বাজেটের সুফল সাধারণ মানুষ পর্যন্ত খুব একটা পৌঁছায় না। বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের যুক্তি হলো, তারা তো জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি ঋণ করছে না। যেহেতু ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি হচ্ছে না। সেহেতু তাদের মতে সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঋণের মূল পরিমাণ তো ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। আগে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো ছিল, সেটা এখন ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হয়ে যাচ্ছে। বাজেটের বিরাট একটা অংশ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের কর জিপিডি অনুপাত কাক্সিক্ষত হারে বাড়ানো যাচ্ছে না। সেটা অনেক দিন ধরেই ৭-৯ এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও আমাদের দেশের ধনীর সংখ্যার বিবেচনায় এটা ২০ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তা হচ্ছে না। এতে আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। যার ফলে আমাদের বাজেট ঘাটতি বেড়েই চলছে। এজন্য আমাদের ধনী শ্রেণির লোকদের করের আওতায় আনতে হবে। তাদের জন্য করের হার বাড়াতে হবে। আর অপেক্ষাকৃত কম সম্পদের মালিকদের জন্য করের হারও কম হতে হবে। এটা করতে পারলে একদিকে কর বাড়বে অন্যদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্যটাও কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর্থিক খাতের সংকট উত্তরণ করা সম্ভব নয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কতগুলো সংস্কারের বিষয়ে আইএমএফ আমাদের চাপ দিয়ে আসছে। অবশ্য আমরা অর্থনীতিবিদরা এসব ব্যাপারে আরও অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। এখন এগুলো বাস্তবায়নের ঘোষণাও দিয়েছে সরকার। আবার আসছে বছরে সংকোচনমূলক বাজেট দিতেও প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এতে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ হয়তো কিছুটা কমে যাবে। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ঠিকঠাক করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটা ইতিবাচক প্রভাবই পড়তে পারে। কিন্তু তা রাজনৈতিক দৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর