শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধরাছোঁয়ার বাইরে কোকেন মাফিয়ারা

অন্যতম রুট চট্টগ্রাম, যাচ্ছে ভারত মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কোকেন পাচারের ট্রানজিট রুট বৃহত্তর চট্টগ্রাম। যাচ্ছে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। মাঝে-মধ্যে বহনকারীরা আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন হোতারা। আটকের ঘটনায় মামলাও হয়। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতায় চার্জশিটে নেপথ্য কারিগরদের নাম আসছে না। ফলে নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছেন মাদক মাফিয়ারা।

মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে সদ্য বদলি হওয়া অতিরিক্ত পরিচালক জাফরল্যাহ কাজল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩টি নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও গত দুই বছরে কোনো কোকেন আসক্ত পাওয়া যায়নি। অথচ একই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক চালান জব্দ করেছে। মাদকের মামলাগুলো ‘পজিশন মামলা হওয়ায়’ চার্জশিটে শুধুমাত্র বহনকারীকে আসামি করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘কোকেন মামলা তদন্তকালে দেখা গেছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাদক পাচারে ‘কাটন আউট’ পদ্ধতি অনুসরণ করে মাফিয়ারা। তাই মাদক বহনকারী মাফিয়াদের বিষয়ে খুব একটা জানে না।’

জানা গেছে-চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মাদক চালান জব্দ করেছে র‌্যাব-৭। র‌্যাবের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শরীফ উল আলম বলেন, আইন অনুযায়ী যার কাছে মাদক পাওয়া যায়, তাকেই অভিযুক্ত করতে হয়। তাই কোকেন ক্যারিয়ারের বাইরে কোনো আসামি করা হয়নি।’ জানা যায়, গত এক দশক ধরে কোকেন পাচারের অন্যতম অপ্রচলিত রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম। এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল (মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড) হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা চট্টগ্রামকে কোকেন পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছেন। চট্টগ্রাম হয়েই মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে কোকেন। গত তিন বছরে কমপক্ষে ১০টি চালান জব্দ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। কিছু মামলার চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। তবে আসামি করা হয়েছে শুধুমাত্র ক্যারিয়ারকে। মাদক গবেষক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, কোকেন উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা, কলম্বিয়া, পেরু এবং বলিভিয়া। উচ্চমূল্যের এ মাদকসেবনকারী দেশগুলো মধ্যে রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য। সম্প্রতি ভারতেও কোকেনের বাজার তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়া বাংলাদেশকে অপ্রচলিত রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) গ্লোবাল কোকেন রিপোর্ট-২০২৩-এ উল্লেখ করা হয়েছে- বিশ্বে প্রতি বছর ২ হাজার টন কোকেন উৎপাদন হয়। উৎপাদনকারী তিনটি দেশই দক্ষিণ আমেরিকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬১ শতাংশ কলম্বিয়া, ২৬ শতাংশ পেরু এবং ১৩ শতাংশ বলিভিয়ায় উৎপাদন হয়। ব্যবহারকারীদের ৩০ শতাংশ উত্তর আমেরিকা, ২৪ শতাংশ দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল এবং ২১ শতাংশ ইউরোপের। এ ছাড়া আফ্রিকা এবং এশিয়ায়ও সেবনকারী রয়েছে।

সর্বশেষ খবর