শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিতর্কিতদের দৌড়ঝাঁপ

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা যে কোনো সময়

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের আংশিক কমিটি ঘোষণা হতে পারে যে কোনো সময়ে। এসব পদে আসতে বিতর্কিত, হাইব্রিড, ফ্রিডম পার্টি করা ব্যক্তি, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, বিত্তশালী যুবদল নেতা, রাজাকারের সন্তানেরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। উভয় অংশের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। এই দুই শাখার আওতাভুক্ত থানা ও ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন প্রায় দুই বছর হলেও দেওয়া হয়নি কমিটি। দক্ষিণের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কারণে এতদিন কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে দাবি সংগঠনের নেতাদের। এখন সব বাধা কেটে গেছে। সব কাজ গুছিয়ে এনেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আগামী ৩ জুন থেকে ৬ জুনের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে খসড়া কমিটি জমা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি ঘোষণা করবেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কাজ শেষ করেছি। যে কোনো সময়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে জমা দেব। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বা নেত্রী কবে কমিটি ঘোষণা করবেন সেটা বলতে পারছি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্যাগী-পরীক্ষিত ও মাঠের লোক দিয়েই আমরা তালিকা তৈরি করেছি। হঠাৎ হওয়া আওয়ামী লীগ বা উড়ে এসে জুড়ে বসাদের স্থান হবে না।’ মহানগরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ জুন থেকে ৬ জুনের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানার আংশিক কমিটি জমা দেওয়া হবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের কাছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যাচাই-বাছাই করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করবেন। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তীর আগেই ঘোষণা করা হতে পারে কমিটি। কারণ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর উপলক্ষে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি পালন করা হবে ঢাকাতে। সে কারণে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলে ওয়ার্ড-থানা নেতাদের দায়িত্ব যেমন বেড়ে যাবে, তেমনি লোক সংখ্যা নিয়ে আসারও প্রতিযোগিতা থাকবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ৩ তারিখে কমিটি জমা দেবে বলে আমাকে জানিয়েছেন দুই মহানগরের নেতারা। তারা থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম দিতে চেয়েছে। আমি পদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে বলেছি। মহানগরের নেতারা আমাদের কাছে কমিটি জমা দিলে আমরা নেত্রীর কাছে জমা দেব। নেত্রী যখন চাইবেন, তখনই কমিটি ঘোষণা হবে।’ জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার আভাস পেয়ে থানা-ওয়ার্ডে পদ পেতে জোর লবিং তদবির শুরু করেছেন বিতর্কিত, হাইব্রিড, ফ্রিডম পার্টি করা ব্যক্তি, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, বিত্তশালী যুবদল নেতা, রাজাকারের সন্তানেরা। তারা মহানগরের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি তাদের সন্তান, আত্মীয়স্বজন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা বাড়িতে আসা যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ অর্থ ডোনেশন করে পদে আসতে চাইছেন বলে পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একাধিক নেতা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, ওয়ারী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, লালবাগ, খিলগাঁও এলাকায় নেতা হতে বিতর্কিতরা সবচেয়ে বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন। তারা মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বাসাবাড়ি ছাড়াও তাদের সন্তানদের কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন। কেউ কেউ উপঢৌকন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। সন্তান ও ভাই, আত্মীয়স্বজনদের রাজনীতিতে ‘থিতু’ করতে চান কেউ কেউ। যদিও অনেকের সন্তানকে পদ দেওয়া হলে এবারই প্রথম দলীয় পদ বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড-থানা কমিটি গঠনের কাজ আমরা শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। যে কোনো সময়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে জমা দেব।’ বিতর্কিতদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, পুরনো ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের। এরপরও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যাচাই-বাছাই করবে, কোনো ধরনের ত্রুটি পেলে সেখানে পরিবর্তন আনতে পারে। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তরের শেরেবাংলা নগর, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, বনানী, গুলশানে বিতর্কিতরা দৌড়ঝাঁপ বেশি করছেন বলে জানা গেছে। দুই মহানগরীর অনেক নেতাই বলেছেন, স্বজনপ্রীতি এখন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওপেন সিক্রেট। কমিটি গঠনের জন্য স্বজনপ্রীতি যেমন করছেন কেউ কেউ, তেমনি পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধাও নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর