শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাদকের হটস্পট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ঝরে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা, ডোপ টেস্টের দাবি

রায়হান ইসলাম, রাবি

মাদকের হটস্পট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রিমা (ছদ্মনাম) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বহু তপস্যার পর ভর্তি হন ইংরেজি বিভাগে। প্রথম বর্ষে সেরা পঁচিশে থাকলেও পরবর্তীতে মাদকাসক্তের কারণে তিনি আর এ অবস্থা ধরে রাখতে পারেননি। আরেক শিক্ষার্থী মাদকসহ আটক হওয়ার পর তার নামে মামলা হয়। পরবর্তীতে অপহরণের আরেকটি মামলায় জড়িয়ে পড়লে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন বহু শিক্ষার্থী মাদকাসক্তের কারণে একাডেমিকভাবে ঝরে পড়ছেন। মানসিক অবসাদগ্রস্ত থাকার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেবল মুচলেকা দিয়েই ছাড়া পেয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান হয়ে উঠেছে গাঁজা ও ফেনসিডিল সরবরাহের হটস্পট। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মাদক সমস্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। খুব শিগগিরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২০ মাসে ক্যাম্পাসে মাদক সম্পৃক্ততায় আটক হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। মাদকসহ আটক হওয়ায় ছাত্রলীগের চার নেতার নামে মামলাও হয়। আটককৃত প্রায় ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রথমবর্ষে যে শিক্ষার্থীর ফলাফল ফার্স্ট ক্লাস ছিল, পরবর্তীতে মাদকাসক্তের কারণে একাডেমিকভাবে তারা পিছিয়ে গেছেন। অকৃতকার্য হয়ে অনেকের ১-২ বছর ড্রপ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. পুরনজিৎ মহালদার বলেন, ‘গত দুই বছরে ক্যাম্পাসে মাদক-সংশ্লিষ্টতায় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পেয়েছি। অধিকাংশই ভুল স্বীকার করে এ কাজ থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করলেও ফের ধরা পড়ে। পরবর্তীতে এরাই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।’

ক্যাম্পাসে মাদকের হটস্পট : ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান মাদক সরবরাহের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে গেছে, ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রি করেন নগরীর বিনোদপুর এলাকার মৃত খালেকের ছেলে শাওন। তিনি আমির আলী হলের পাশে কলার ব্যবসার পাশাপাশি এ কাজ করেন। তার মুঠোফোন অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর মাদক-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তিনি প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের কাছে ১০-১৫ হাজার টাকার মাদক বিক্রি করেন। নগরীর জাহাজঘাট এলাকার আরেক ব্যবসায়ী তাকে মাদক সরবরাহ করে। চারুকলা সংলগ্ন রেললাইনের বস্তিতে জোসনা নামের এক মহিলাকে একেকটা পুঁটলি ১০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। জুবেরি মাঠেও চলছে রমরমা ব্যবসা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ ব্যবসা চলে। সূত্র বলছে, নবীন শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এ মাদক কারবার করছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর ডোপ টেস্ট নিশ্চিত ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর