শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

পর্দা নামল নৃত্য উৎসবের

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

পর্দা নামল নৃত্য উৎসবের

শাস্ত্রীয় সংগীত এবং নাচের মুদ্রার অনন্যতায় গতকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শেষ হলো ছয় দিনের শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব। অনুষ্ঠানের শুরুতে দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শাস্ত্রীয় সংগীত কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীরা। কল্যাণ ঠাটে ভূপালি রাগে তারা খেয়াল পরিবেশন করেন। তবলায় সঙ্গত করেন বাদল চৌধুরী, হারমোনিয়ামে এবং পরিচালনায় ইমামুর রশিদ। এরপর দলীয় মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমি ফর মণিপুরী কালচার অ্যান্ড আর্টস, সিলেটের শিল্পীরা। পর্যায়ক্রমে মধুবন্তী রাগে অন্তরা মন্ডল কাহে মান করো সখিরী আব বন্দিশ গেয়ে শোনান। একক কণ্ঠে শৈলী ধ্রুপদ পরিবেশন করেন এ কে এম কৌশিক আহমেদ। একক ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন জুয়েইরিয়াহ মৌলি এবং কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন শেখ আবিদুর রহমান কচি। এ ছাড়া ঠাট মরবায় রাগ জ্যায়েত পরিবেশন করেন এফ এম রেজোয়ান আলী। এককভাবে ঠুমরি পরিবেশন করেন উর্বী সোম, মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা এবং ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন মোহনা মীম। ধারাবাহিক পরিবেশনায় ভূপালি রাগে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন ইমামুর রশিদ। একক কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন দীপা সরকার ও ফারজানা ইয়াসমিন। কল্যাণ ঠাটে মারুবিহাগ রাগ পরিবেশন করেন আফরোজা আক্তার রুপা। অনুষ্ঠানে দলীয় মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল ভাবনা।

সংস্কৃতি খাতে বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দ দাবি : সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গতকাল বিকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘জাতীয় বাজেট : সংস্কৃতি খাতে ১ শতাংশ বরাদ্দের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, ম. হামিদ, এম এম আকাশ, ফওজিয়া মোসলেম, মানজারে হাসিন মুরাদ, আসিফ মুনির তন্ময়, আজাদ আবুল কালাম, আহকামউল্লাহ, মিজানুর রহমান, রাহুল রাহা, রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, ডা. লেলিন চৌধুরী, মানজারুল ইসলাম চৌধুরী সুইট, জাকির হোসেন, নারায়ণ চন্দ্র শীল, প্রণয় সাহা, আবদুস সেলিম, ড. আজিজুর রহমান, রঘু অভিজিৎ রায়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

মূল প্রবন্ধে অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘জাতীয় জীবনে সংস্কৃতি চেতনা দুর্বল হলে অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। সংস্কৃতির যে মানবীয় রূপ তা ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে এবং কেবল মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিনোদনের উপকরণে পর্যবসিত হয়। সাম্প্রদায়িক ভেদচিন্তা ক্রমান্বয়ে মানবিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়ে চলছে। এতে সমাজ এবং রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। একদিকে উন্নয়নের নামে লুটপাট বাণিজ্য, অর্থ পাচার; অন্যদিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির গর্ভজাত ভোগবাদ, যৌনতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, মৌলবাদী গোষ্ঠীর তান্ডব জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক গণজাগরণ এখন সময়ের প্রয়োজন। যাকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত হবে নবীন চিত্রকলা, সংগীত, নাটক ও কাব্য। কিন্তু তার জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং সদিচ্ছাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বিগত কয়েক বছর ধরে দাবি উঠছে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ ভাগ বরাদ্দ দেওয়ার। কিন্তু তা ০.০৯ থেকে ০.১৬ ভাগের ওপরে ওঠেনি কোনোভাবে।’ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের জন্য বরাদ্দের একটা অংশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার মধ্যে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার, পুতুল নাট্য উৎসব, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব, যন্ত্রসংগীত উৎসব এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। বাস্তবে দেখা গেছে প্রায় সব অনুষ্ঠানই হয়েছে শিল্পকলার চৌহদ্দিতে মিলনায়তনের ভিতরে। যেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ শিল্পকলা একাডেমির দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে কী হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করে। ভিতরে গিয়ে দেখার সাহস তাদের নেই। অথচ সংবিধানের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে সর্বস্তরের জনগণ যাতে জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এবং অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘আমরা যদি সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে ব্যর্থ হই তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যতই হোক না কেন তা একসময় বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়বে। সুতরাং সবার আগে এ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে এ খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় তা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ আর শিল্পকলা একাডেমিকেন্দ্রিক শহুরে মানুষের চিত্তবিনোদনের কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নে শেষ হয়ে যায়। তা গ্রামীণ জনপদের মানুষ বা শ্রমজীবী মানুষের সংস্কৃতি বিকাশে কণামাত্র অর্থও অবশিষ্ট থাকে না। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এ ভূখন্ডের সংস্কৃতি বিনির্মাণে বিশেষ করে আমাদের লোক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নির্মাণে গ্রামীণ জনপদের মানুষের ভূমিকাই অগ্রগণ্য। শুধু তাই নয়, সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতিকর্মীরাই রাষ্ট্রের বহুমাত্রিক সংকটে গণমানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করে থাকেন। প্রেরণা জোগান ঘুরে দাঁড়াতে।’

সর্বশেষ খবর