শিরোনাম
শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়

প্রতিদিন ডেস্ক

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়

ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিধ্বস্ত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া বেড়িবাঁধ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রিমেলের পর ক্ষতিগ্রস্ত পাথরঘাটার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামেনি, সাতক্ষীরার ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার মানুষ, গোপালগঞ্জে সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- পাথরঘাটা (বরগুনা) : উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছু তছনছ করে দিয়ে গেছে রিমাল। তবে এরকম ক্ষতে উপকূলবাসী অভ্যস্ত হলেও নতুন মাত্রা যোগ করে দিয়েছে রিমাল। জানের ক্ষতি না হলেও পাথরঘাটা উপকূলের মালের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলায় দেখা দিয়েছে লবণাক্ত এবং পানিবাহিত নানা রোগ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তা বে প্রতিটি বসতবাড়িই যেন ধ্বংসস্তূপ। কোথাও গাছ ভেঙে বসতঘরে পড়ে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, কোথাও পুকুরে গাছের ডালপালা-পাতা পড়ে পানি নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে পানিতে  মাছ, হাস মুরগি, কোথাও কোথাও গরু ছাগল মরে পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। একে তো পরিবেশ দূষিত হয়েছে অন্যদিকে পানি পচে পানিবাহিত নানা রোগের সংক্রমণ তৈরি হয়েছে।  পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা বলেন, একে তো লবণাক্ত পানি ঢুকেছে, অন্যদিকে গাছের পাতায় পানি পচে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। এই পানি ব্যবহার না করাই উত্তম। পাথরঘাটার ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, রিমালে ঘরবাড়ি গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়, তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে সংকটে পড়েছে সুপেয় পানি, বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান না করার কোনো সুযোগ নেই।  সুলতানা নাদিরা এমপি বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড়ের আগেই এলাকায় এসেছি। মানুষের ক্ষয়ক্ষতি দেখেছি পাশে থেকে খাদ্য সহায়তাসহ সব রকমের সহায়তা এখনো দিচ্ছি।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ ও ২ এর অধীনে ২০টি পয়েন্টে এসব বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীবেষ্টিত সুন্দরবন সংলগ্ন ব-দ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়নের সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন করে ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার বসবাসরত ৪৩ হাজার মানুষ। এ ছাড়া আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, বিছট, অনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর ৭/২ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পশ্চিম খাজরা রাজবংশীপাড়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী জরাজীর্ণ বাঁধ নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির খানজিয়া, দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এলাকায় ব্যাপক ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদীর প্রবল জোয়ারে ভাঙনের ভয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকায় জিওব্যাগ ও অনান্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। ঝড়ের মধ্যে সার্বক্ষণিক এলাকাবাসীকে নিয়ে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে গাবুরাসহ অনান্য স্থানে।

গোপালগঞ্জ : রিমালের তা বে গোপালগঞ্জে একটি সেতু বিধ্বস্ত হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম-সিলনা সড়কে সিলনা বাজারসংলগ্ন শির খালে নির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়ে। এতে গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার একটি অংশের ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশাল জনগোষ্ঠীকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটিই ব্যয় হচ্ছে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সড়কটি দিয়ে গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জেলা শহর, কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াত করে থাকেন। সেতুটি ভেঙে পড়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন বলেন, রিমালের আঘাতে গোপালগঞ্জে কিছু ক্ষতি হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রাম থেকে টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের এলজিইডি নির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ এবং টুঙ্গিপাড়ার একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর