শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে আজ শেষ দফা ভোট

ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে ৯০৪ প্রার্থীর

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভোট আজ। ভোট নেওয়া হবে আট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৭ আসনে। এর মধ্য দিয়ে ৫৪৩ আসনের লোকসভা নির্বাচন শেষ হবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, প্রথম দফায় ৬৬.১৪, দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১, তৃতীয় দফায় ৬৫.৬৮, চতুর্থ দফায় ৬৯.১৬, পঞ্চম দফায় ৬২.২ এবং ষষ্ঠ দফায় ৬৩.৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। শেষ দফায় ভোট নেওয়া হবে উত্তর প্রদেশ (১৩), পাঞ্জাব (১৩), পশ্চিমবঙ্গ (৯), বিহার (৮), ওড়িশা (৬), হিমাচল (৪), ঝাড়খন্ড (৩), চন্ডীগড় (১) আসনগুলোয়।

আজ দেশজুড়ে ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে অন্যতম বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে তিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের অজয় রাই। প্রথমবার, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ কেন্দ্র থেকে জয় লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদি। ওই নির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ) প্রার্থী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ৩,৭১,৭৮৪ ভোটে পরাজিত করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয়বার, ২০১৯ সালের নির্বাচনেও এ কেন্দ্র থেকেই সাংসদ হয়েছিলেন মোদি। সেবার ৪,৭৯,৫০৫ ভোটে পরাজিত করেছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী শালিনী যাদবকে। মোদি পেয়েছিলেন ৬,৭৪,৬৬৪ ভোট (৬৩.৬২ শতাংশ), শালিনী যাদব পেয়েছিলেন ১,৯৫,১৫৯ ভোট (১৮.৪০ শতাংশ), তৃতীয় স্থান পেয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাই। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১,৫২,৫৪৮ (১৪.৩৮ শতাংশ)। বারাণসী আসন এলাকা বরাবরই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০১৪ সালের আগে এ আসনটি ছিল সিনিয়র বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর যোশির।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী অনুরাগ ঠাকুর (হামিরপুর), রবি শংকর প্রসাদ (পাটনা সাহিব), বিজেপি প্রার্থী ভোজপুরি অভিনেতা রবি কিষান (গোরখপুর), বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে আরজেডি প্রার্থী মিসা ভারতী (পাটলিপুত্র), সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা (কাংড়া), বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত (মান্ডি), তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি (ডায়মন্ড হারবার), টলিউড অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (যাদবপুর), বিজেপির রেখা পাত্র (সন্দেশখালি), শিরোমণি আকালি দলের প্রার্থী হরসিমরাত কৌর বাদল (ভাতিন্ডা)।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল এনডিএ। এর মধ্যে এককভাবে ৩৭০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিজেপির। অন্যদিকে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য ক্ষমতা থেকে এনডিএকে হটিয়ে দেওয়া। সে ক্ষেত্রে টানা তৃতীয়বারের জন্য মোদি সরকার ক্ষমতায় আসবে কি না, নাকি দিল্লি মসনদে বসবে ‘ইন্ডিয়া’র কোনো নেতা-সেটাই এখন দেখার। ৪ জুন ভোট গণনার দিনই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তবে তার একটা পূর্বাভাস হয়তো পাওয়া যেতে পারে আজ সন্ধ্যায়। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধঘণ্টা পরই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে এক্সিট পোল (বুথফেরত জরিপ)। সর্বভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি সংস্থাও এ এক্সিট পোল চালিয়ে থাকে। তাতে কেবল একটি পূর্বাভাস পাওয়া যায় যে চলমান নির্বাচনে কোন দল বা জোট কটি আসন পেয়ে সরকারে আসতে চলেছে। অতীতে বহু ক্ষেত্রেই এক্সিট পোলের পূর্বাভাসের সঙ্গে মিল দেখা গেছে নির্বাচনি ফলাফলের।

শেষবার ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর বিভিন্ন এক্সিট পোলের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল ২৮৫ আসনে জয় পেতে পারে বিজেপি। কার্যক্ষেত্র দেখা যায় তার থেকে অনেক বেশি, ৩৫৩ আসনে জয় পায় এনডিএ। এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৩ আসন পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট’ বা ইউপিএ ৯১ আসনে জয়ী হয়। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পায় ৫২ আসন।

পশ্চিমবঙ্গ : শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গের নয়টি লোকসভা আসনের দিকেও নজর থাকবে। ভোট নেওয়া হবে দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ।

দমদম কেন্দ্রে বর্তমান সাংসদ ও তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়, বিজেপির শীলভদ্র দত্ত এবং বামেদের সুজন চক্রবর্তী; বারাসাত কেন্দ্রে তিনবারের জয়ী সাংসদ তৃণমূলের প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বিজেপির স্বপন মজুমদার, বামেদের সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, আইএসএফের তাপস ব্যানার্জি।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বসিরহাট আসনের বর্তমান সাংসদ নুসরাত জাহানকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তাঁর বদলে দলের প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম, বিজেপির রেখা পাত্র, সিপিআইএমে নিরাপদ সরদার। সম্প্রতি এ কেন্দ্রের সন্দেশখালিতে মহিলাদের ওপর অত্যাচার, ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। সে ঘটনার প্রতিবাদী মুখ রেখাকে প্রার্থী করার পর তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবে নজর থাকবে এ কেন্দ্রের দিকেও। জয়নগর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী সাংসদ প্রতিমা মন্ডল, আরএসপির সমরেন্দ্রনাথ মন্ডল, বিজেপির অশোক কান্ডারী। মথুরাপুর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বাপি হালদার, সিপিআইএমের শরৎচন্দ্র হালদার, বিজেপির অশোক পুকাইত।

ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের প্রার্থী মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি। এ আসনে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিআইএমের প্রতীকুর রহমান, বিজেপির অভিজিৎ দাস। যাদবপুরে বর্তমান সাংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তাঁর বদলে প্রার্থী করা হয়েছে আরেক অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে। সায়নীর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলী আর সিপিআইএমের সৃজন ভট্টাচার্য। কলকাতা উত্তরে তৃণমূলের প্রার্থী তিনবারের বিজয়ী সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির তাপস রায়, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। কলকাতা দক্ষিণ আসনে বর্তমান সাংসদ মালা রায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এ আসনে বিজেপির প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, সিপিআইএমের সায়রা শা হালিম। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এ নয়টি আসনেই জয় পেয়েছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে চলমান নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গে অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে বিজেপি, পাশাপাশি শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বামেদেরও। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি আসনেই জয় ধরে রাখা তৃণমূলের কাছে শক্ত চ্যালেঞ্জ।

সর্বশেষ খবর