রবিবার, ২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
রিমালের তাণ্ডব

ক্ষতির পরিমাপ চলছে বিধ্বস্ত জনপদে

প্রতিদিন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে উপকূলীয় জনপদে চলছে ক্ষতির পরিমাপ করার কাজ। এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের অনুসন্ধান দল। এ বিষয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বাগেরহাট : বাগেরহাটে রিমালের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা ৩৬ ঘণ্টা ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে জেলার ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা।

জলোচ্ছ্বাসে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫০ হাজারের অধিক পরিবার। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মারেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৪২ হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুর। এখন চলছে এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের কাজ।

খুলনা : ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভেঙে যাওয়া কয়রার দশালিয়ার বেড়িবাঁধ পাঁচ দিন পর স্বেচ্ছাশ্রমে বেঁধে ফেলেছেন স্থানীরা। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চার শতাধিক স্থানীয় মানুষ এই বাঁধ বাঁধার কাজ করেন। ফলে কয়রার দশালিয়ায় নদীর পানিতে প্লাবিত দুটি গ্রাম ও বিস্তীর্ণ চিংড়ি ঘের জলাবদ্ধতামুক্ত হলো। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালের সচিবসহ পানি উন্নয়ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বাঁধ বাঁধার কাজ দেখভাল করেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া বেড়িবাঁধটির দুই স্থানে ভেঙে যায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের ভাটিতে ভেঙে যাওয়া দুটি অংশ মেরামত করা হলেও প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ ও বাঁশ-খুঁটির অভাবে এক জোয়ারেই বাঁধটি পুনরায় ভেঙে যায়। গতকাল চার শতাধিক স্থানীয় গ্রামবাসী সকাল থেকে ৭ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বাঁধটি আটকাতে সক্ষম হন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়।  পাথরঘাটা (বরগুনা) : ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী তথ্য সংগ্রহে গিয়ে হঠাৎ দেখা মেলে ৯৮ বছরের আ. মোতালেব শরীফের সঙ্গে। দূর থেকে দেখা এই বৃদ্ধ বারবার ভাঙা ঘরটি দেখছিলেন আর চোখের পানি মুছছিলেন কাঁধে থাকা গামছায়।  আ. মোতালেব (৯৮), পিতার নাম মৃত রসুল আলী শরীফ, বাড়ি পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের উত্তর চরলাঠিমারা (পাঁচ চূঙ্গা) এলাকায়। দীর্ঘ বছর বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ওপরেই বসবাস করছেন এই দম্পতি। চার সন্তান তারা নিজেদের সংসার নিয়েই আছেন। কোনো রকম বেঁচে আছেন তারা। ৯৮ বছরেও তার বাড়ি চারবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রশ্ন করতেই কেঁদে উঠলেন মোতালেব। বললেন, ‘বাবারে বাঁইচা আছি এডাই কপাল। কী জিগায়বেন আর কী কমু...। মোগো পোড়া কপাল নিয়া জন্মাইছি। বাপ দাদার যে জমি আছিল তা নদীতে খাইয়া হালাইছে। বহু বছর বইরা ওয়াপদায় থাহি। এই বয়সে ৭০ এর বইন্যা দেখছি, সিডরসহ কত বইন্যা, কিন্তু এবারের (রিমাল) বইন্যার মতো দেখি নাই।’ একই গ্রামের বাদল সরদার বলেন, বন্যায় কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি ঠিক, কিন্তু ঘরবাড়ি-গাছপালা, কৃষি ও মাছের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। দীর্ঘ সময় পানি থাকায় এমন অবস্থা। বেড়িবাঁধ কয়েক জায়গা থেকে ভেঙেছে।

পাথরঘাটা ইউএনও রোকনুজ্জামান খান বলেন, তিগ্রস্তদের তালিকা চূড়ান্ত প্রায়। খুব সাবধানতার সঙ্গে আমরা কাজ করছি। ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ সহায়তা থেকে বাদ পড়বে না বলে আশা করছি।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৮০ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত শুরু করেছে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ, কলবাড়ি, নীলডুমুরসহ বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন। নেতাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এমপি এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাতক্ষীরা-১ (তালা কলারোয়া) আসনের এমপি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। পরে উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসরত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন নেতারা।

পটুয়াখালী : রিমালের তান্ডবে পটুয়াখালীতে ৪৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এগুলো মেরামত বা সংস্কার করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

কলাপাড়া : উপজেলার ১ হাজার ৬৭১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ২৬ হাজার ৯টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন সূত্র। দুর্গত এসব মানুষের কাছে ত্রাণ সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ জন প্রতিনিধিরা। উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহনির্মাণ বাবদ টিন এবং অন্যান্য উপকরণ ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ আছে, যা দ্রুতই তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর