শিরোনাম
সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতিই বড় ব্যর্থতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতিই বড় ব্যর্থতা

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, এ মুহূর্তে অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একটি বড় ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতি শুরু হয়েছে কভিডের সময়, পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অব্যাহত রয়েছে। এর জন্য অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতিই বড় ব্যর্থতা। গবেষণা সংস্থা সিপিডির বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতিতে আমরা ৯ ও ১০ শতাংশে অবস্থান করছি। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা বড় ধরনের ব্যর্থতা। যেমন- ২০১৯ সালের তুলনায় মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১৭ ভাগ, পাইজামের দাম ১৫ ও মোটা চাল ৩০ ভাগ। অর্থাৎ মুনাফাখোররা বেশি লাভ যেখানে করছে, যে পণ্য গরিব ও মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এবং বাজারে বেশি বিক্রি হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি মুসর ডাল ৯৫, আটা ৪০-৫৪, ময়দা ৬০, খোলা সয়াবিন ৮৪ ভাগ, বোতলজাত সয়াবিন ৫৬ ও পামঅয়েলে ১০৬ ভাগ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গরুর মাংসের দামও বেশি, ব্রয়লার মুরগি ৬০ ভাগ, চিনির দাম ১৫২ ভাগ, গুঁড়া দুধ ৪৬-৮০, পিঁয়াজ ১৬৪, রসুন ৩১০ ও শুকনা মরিচ ১০৫ ভাগ বেড়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে খাদ্যমূল্য বিবেচনা করলে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি। আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। গরিবের আয় বাড়েনি। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের ভূমিকা রাখতে পারছে না। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ আয় ২ হাজার ৬৭৫ মার্কিন ডলার, আর মাথাপিছু জাতীয় আয় ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। মাথাপিছু গড় আয় যতটুকু পেয়েছি, মূলত উচ্চ আয় করেন তাদের কারণে। গরিব মানুষদের কথা বিবেচনা করলে তাদের আয় কমে গেছে। এখানে বৈষম্য বেড়েছে। তাদের উন্নতি হয়নি। বেসরকারি বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া একটি বড় কারণ। বিষয়টি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মনে করছি। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসব বৈশ্বিক বিষয় ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে অর্থনীতি ধারাবাহিক ভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। নীতির ক্ষেত্রে দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব, প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যর্থতা। এই বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে চলছে। এ ছাড়াও দুর্বল রাজস্ব আদায়, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্র কমে আসা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের অব্যাহত ভাবে ঋণ গ্রহণ। বাণিজ্যিক ব্যাংকে তারল্য চাপ অনুভব করা। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য। বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি। এসব আমরা গত তিন কোয়ার্টারে দেখে এসেছি। এই চ্যালেঞ্জগুলো নতুন নয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরও একই পরিস্থিতির মধ্যে পার করেছি। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে আর্থিক খাতে যে সংস্কার শুরু হয়েছে তার ইতিবাচক ফলাফল এখনো অর্থনীতিতে দেখতে পারি নাই। আমাদের প্রত্যাশা আগামী বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতাকে ফিরিয়ে আনা। আইএমএফর নীতি সংস্কারে যাওয়ার কারণে প্রবৃদ্ধিতে টান পড়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিক স্থিতিশীলতায় অর্জনে নজর দেওয়া বেশি প্রাধিকার পাওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর