বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানে না কেউ

আরাফাত মুন্না

পরিবেশ সুরক্ষায় উচ্চ আদালত থেকে একের পর এক নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতায় উপেক্ষিত থাকছে এসব রায় ও আদেশ। গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচ্চ আদালতে দফায় দফায় তলবের ঘটনাও ঘটছে। গত ২০ বছরে পরিবেশ সুরক্ষায় উচ্চ আদালতে ৮ শতাধিক মামলা করেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন।  কয়েকটি ঘটনায় অন্তত ৬০ সরকারি কর্মকর্তার নামে দায়ের করা হয়েছে আদালত অবমাননার মামলা।

রিটকারীরা খুব বেশি তৎপর থাকলে রায় বা নির্দেশনা আংশিক বাস্তবায়ন হলেও, তাদের তৎপরতা না থাকলে ফাইলবন্দিই থেকে যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়তই উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট প্রভাবশালীদের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।

যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা পালন সবার জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা অবজ্ঞা করা হলে সেটি হবে আদালত অবমাননার শামিল। আর যত প্রভাবশালীই হোক, নির্দেশনা অমান্যকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে জনসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে বলেও মনে করছেন তারা। উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে মনিটরিং সেল গঠন করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা। জানা গেছে, গত তিন দশকে নদী দখল-দূষণ, বায়ুদূষণ, গাছ কাটা, পাহাড় কাটা, খাল-বিল দখল-দূষণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার আলাদা আইন করেছে। পরিবেশের সুরক্ষায় সরকারের রয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিবেশদূষণ রোধে বছরজুড়ে সারা দেশেই চালানো হয় পরিবেশ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর পরও যেন থামছে না পরিবেশ দূষণ। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবেশ রক্ষায় একাধিক আইন ও পৃথক আদালত রয়েছে। তবে আইনের নানা সীমাবদ্ধতার কারণেই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পরিবেশ আদালতে সরাসরি কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা করতে পারেন না। মামলা করতে হলে অভিযোগ জানাতে হয় পরিবেশ অধিদফতরে। এসব জটিলতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংক্ষুব্ধরা আর এগিয়ে আসেন না। অন্যদিকে, পরিবেশ দূষণরোধে দেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো বরাবরই সোচ্চার। গত ২০ বছরে পরিবেশ সুরক্ষায় উচ্চ আদালতে ৮ শতাধিক মামলা করেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন। এর মধ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) উল্লেখযোগ্য। এ দুটি সংগঠনের তথ্যমতে, বেলা এখনো পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি মামলা করেছে। এইচআরপিবির মামলার সংখ্যা ১২০-এর বেশি। দুটি সংগঠনের প্রায় ৩০০ মামলা এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। যেসব মামলায় রায় বা আদেশ হয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ সংগঠনগুলোর। পরিবেশ রক্ষায় ১০০টিরও বেশি রিট করা আইনজীবী হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিবেশ সংক্রান্ত ১২০টিরও বেশি রিট করেছি। অধিকাংশ রিটেই রায় পেয়েছি। কিন্তু রায় বাস্তবায়নের সংখ্যা খুব কম। কর্ণফুলী নদীর দুই অবৈধ দখল-দূষণ নিয়ে রিট করেছি। রায়ও পেয়েছি। সেই রায় বাস্তবায়ন হয়নি। আদালত অবমাননার আবেদন করার পর কর্ণফুলীতে কিছু উচ্ছেদ হয়েছে। পরে আবারও সব থেমে গেছে। ঢাকার চার নদী নিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ও বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু মামলায়তো আদালত অবমাননার আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে যারা রয়েছেন রায় বাস্তবায়নের দায়িত্বে তারাও নানাভাবে বাধার মুখোমুখি হন। দখল-দূষণে যারা দায়ী তারা অনেক ক্ষমতাধর, সরকারের সঙ্গে তাদের এত ভালো যোগাযোগ, ফলে প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চায় না বা সাহস পায় না।

সর্বশেষ খবর