শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪-২৫

বেসরকারি খাতে ঋণে বাধার শঙ্কা

শাহেদ আলী ইরশাদ

ব্যবসায়ী নেতারা যা বলছেন - সরকার ব্যাংক ঋণ নিলে ব্যবসায়ীদের কষ্ট হবে : এফবিসিসিআই ♦ ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে : ডিসিসিআই  ♦ সামাজিক নিরাপত্তায় আরও বাড়াতে হবে : এমসিসিআই ♦ ব্যবসাবান্ধব নগরীর জন্য বাজেট চায় চট্টগ্রাম চেম্বার

 

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ঋণ পেতে কষ্ট হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। আর ডিসিসিআই বলছে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করে এমসিসিআই। এদিকে ব্যবসাবান্ধর নগরীতে রূপ দিতে বাজেটে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ চায় চট্টগ্রাম চেম্বার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন। বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেছেন, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে। ব্যাংক খাত থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলে ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে কষ্ট হবে। রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী, পরিচালক রাকিবুল আলম দীপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি। ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমাদের ঋণ পেতে কষ্ট হবে। আমি মনে করি বিদেশ থেকে ঋণ নিতে পারলে ভালো হবে। তবে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা বাস্তবায়ন করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন তিনি। এ ছাড়া এআইটি এবং এটি প্রত্যাহার চেয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। করের আওতা না বাড়ালে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা কঠিন হবে। যারা কর দিচ্ছে শুধু তাদের ওপর চাপ না দিয়ে নতুন করদাতা খুঁজতে হবে। তা হলেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সাড়ে ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ। সরকার বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। নতুন করে মেগা প্রকল্প হাতে না নিয়ে চলমান গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামীতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ কম নির্ধারণ করা হয়েছে। তার পরও এটি অনেক বেশি, যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ২০২৪-২৫, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য করব্যবস্থা চালুকরণের উদ্যোগ স্বাগত জানিয়ে এসএমই খাতের জন্য পৃথক ট্যাক্স কোড প্রবর্তন এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অটোমেশনের আওতায় কর প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণর আহ্বান জানান তিনি। করের আওতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের কম, এটাকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমাদের আর্থিক খাতে তারল্য সংকট দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন। যদিও বিষয়টি বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপট ও বৈশি^ক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ এবং আওতা আরও বাড়ানো দরকার ছিল। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এটা একটা চিন্তার বিষয়। সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতকে ঋণ পেতে সমস্যা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যারা নিয়মিত কর দেন, তাদের ওপর চাপ না দিয়ে নতুন নতুন করদাতার কাছ থেকে আদায় করার উদ্যোগ নিতে হবে। সারা দেশে অনেক কোম্পানি আছে যারা কর দেয় না। নতুন করদাতা না বাড়ালে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়বে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ৩০টি খাদ্যপণ্যের করহার কমানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এমসিসিআই সভাপতি। চট্টগ্রাম থেকে মুহাম্মদ সেলিম জানান, চট্টগ্রামকে ব্যবসাবান্ধব বাণিজ্যিক নগরীতে রূপ দিতে বাজেটে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ। তৈরি পোশাকের পরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে দক্ষতা উন্নয়নসহ স্মার্ট জনগোষ্ঠী তৈরির প্রয়াসের পাশাপাশি কারিগরি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। রপ্তানি আয়ের অন্যতম বড় উৎস পোশাকশিল্প টিকিয়ে রাখতে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খলিলুর রহমান।

সর্বশেষ খবর