শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নাটোরের চার যুবক লিবিয়ায় জিম্মি

স্বজনদের আহাজারি

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের গুরুদাসপুরের চার প্রবাসী যুবককে লিবিয়ায় জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে লিবিয়ায় বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন ওই চার যুবক। ছয় দিন ধরে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি যুবকদের পরিবারের কাছে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এমন খবরে জিম্মি যুবকদের বাড়িতে চলছে আহাজারি। ওই চার যুবকের বাড়ি উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রবাসী চার যুবকের পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মো. শাজাহান প্রাং-এর ছেলে মো. সোহান প্রাং (২০), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪), মৃত-শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) ও ইনামুল ইসলামের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়াতে কাজের জন্য যান। সবাইর পরিবার জমি বন্ধক, গরু বিক্রি ও ঋণ করে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। ২ জুন লিবিয়া থেকে ওই চার প্রবাসীর পরিবারের ‘ইমু’ নম্বরে মোবাইল ফোনে কল আসে। রিসিভ করতেই বলা হয় চার যুবককে অপহরণ করা হয়েছে। যারা অপহরণ করেছেন তারাও বাঙালি। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেওয়া হলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা স্তব্ধ হয়ে যান। তারপর থেকেই ‘ইমু’ নম্বরে জিম্মি যুবকদের নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে বলেও জানায় অপহরণকারীরা। প্রবাসী সোহানের বাবা শাজাহান জানান, রবিবার তার মোবাইল ফোনের ‘ইমু’ নম্বরে লিবিয়া থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ছেলে বলছিল, ‘মা বাঁচাও, বাবা বাঁচাও, ১০ লাখ টাকা দিতে হবে, না দিলে ওরা মেরে ফেলবে। তারপর মারধরের ভিডিও পাঠায়। তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ছেলেকে উদ্ধারের জন্য।

আরেক যুবক নাজিমের স্ত্রী নাদিরা বেগম জানান, কীভাবে ১০ লাখ টাকা দিয়ে স্বামীকে তিনি উদ্ধার করবেন। স্বামীকে উদ্ধারের জন্য তিনি ও তার পরিবার সবাইর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জিম্মি সাগরের মা ছকেরা বেগম বলেন, ঋণ করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন দুই বছর আগে। ঋণ এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। এখন আবার ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে ১০ লাখ টাকা। সরকার কিছু না করলে তার কিডনি বিক্রি করে হলেও ছেলেকে উদ্ধার করতে চান। বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সুজা জানান, লিবিয়ায় তার গ্রামের চারজন প্রবাসী যুবককে অপহরণ করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তাদের পরিবারের লোকজন মনে করেছে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, সাংবাদিকদের জানালে তাদের ক্ষতি হবে। এ কারণে হয়তো তারা জানায়নি। তবে তিনি নিজে থেকেই তাদের সরকারের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন জানান, লিবিয়ায় অপহরণের শিকার চার যুবকের কথা শুনে আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছি। স্বজনরা আহাজারি করছেন। ইতোমধ্য আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

সর্বশেষ খবর