শিরোনাম
রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নওগাঁয় পাতা খেলা

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁয় পাতা খেলা

মাঠের মাঝে পুঁতে রাখা আস্ত একটি কলা গাছ। গাছের গোড়ায় মাটির ঘটিতে আমের পাতা ও পানি। পাশেই আরেকটি বাটিতে মন্ত্রপড়া দুধকলা। কলার গাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে খেলোয়াড়দের খেলার জন্য চক্রাকারে দড়ি দিয়ে বাঁধা, যাতে অন্যরা প্রবেশ করতে না পারে। আর ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে খেলোয়াড়দের মাটিতে হাত রেখে শুরু হয় মন্ত্রপড়া। খেলাটির নাম ‘তন্ত্রমন্ত্রে পাতা খেলা’। এটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক এবং পাতা বা সন্ন্যাসী অন্তত ২০ জন অংশ নেন। বাদ্যের তালে তালে সন্ন্যাসীরা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাসীরা কেউ লাফিয়ে কলা গাছে ওঠার চেষ্টা করেন, কেউ বা সাপের মতো ফণা তুলে কলা গাছে আঘাত করেন। কেউ চক্রাকারের ভিতর থেকে মন্ত্রের টানে বেরিয়ে যান। আবারও তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাসীরা কলা গাছটি ভেঙে ফেলেন। এভাবে শেষ হয় পাতা খেলা। আর মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাসীদের মন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ করেন তান্ত্রিকরা। নওগাঁর সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার বিকালে সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের মাঠে এ খেলাটির আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বয়সি হাজারো নারী-পুরুষ এ খেলা উপভোগ করেন। খেলা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, এ খেলা দেখে অন্যরকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে পাতা বা সন্ন্যাসী যাদের বলে তাদের নাচ দেখা হয়। আবার কেউ কলা গাছে ওঠার চেষ্টা করে পিছলে পড়ে যান। আবার ওঝারা ঝাড়ফুঁ করেন। খেলোয়াড় আবদুল আজিজ বলেন, ‘মাঠের মাঝে কলা গাছ পুঁতে রাখা হয়। গাছের গোড়ায় ঘটিতে পানি ও বাটিতে দুধকলা রাখা হয়। খেলায় যারা অংশ নেবেন (পাতা/সন্ন্যাসী) তাদের মন্ত্রদ্বারা মুগ্ধ করা হয়। এরপর তারা ঢোল বা বাদ্যের তালে তালে শারীরিক কসরত ও নাচ করেন। আবার ওঝারা মন্ত্র পড়ে পাতাদের আকৃষ্ট করে কলা গাছের এলাকা থেকে দূরে নিয়ে যান। আবারও পাতারা ছুটে চলে আসেন গাছের কাছে। একসময় পাতারা কলা গাছে উঠে ভেঙে ফেলেন। এরপর খেলা শেষ হয়।’ খেলার আয়োজক ও একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আবদুল বারী ও সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল বলেন, ‘শত বছরের ঐতিহ্য পাতা খেলা। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতে এমন খেলার আয়োজন করা হয়।’

সর্বশেষ খবর