সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোটাবিরোধী বিক্ষোভ আলটিমেটাম

তৃতীয় দিনেও রাজপথে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটাবিরোধী বিক্ষোভ আলটিমেটাম

চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় প্রত্যাহারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।

এদিকে কোটা পুনর্বহাল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বার জর্জ আদালত। সরকারি নিয়োগের দুই শ্রেণিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সম্প্রতি সেটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায় প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, শ্যাডো, টিএসসি হয়ে রাজু ভাস্কর্যে বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের আলটিমেটাম ঘোষণা করছি। ৩০ তারিখের মধ্যে যদি হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয়, তাহলে লাগাতার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সারা দেশের আপামর ছাত্রসমাজ তখন ফুঁসে উঠবে। কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা প্রয়োজনে রক্ত ঝরার মাধ্যমে শেষ হবে।

শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, কোটার মাধ্যমে মেধাবীদের পিষ্ট করা হচ্ছে। আমি নারী হয়ে বলছি- আমি নারী কোটা চাই না। আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। মেধাবীরা যোগ্যতার বলে চাকরি পাবে। প্রধানমন্ত্রীকে উপেক্ষা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘চাকরিতে কোটা, মানি না মানব না’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়/স্বাধীনতার বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, ‘হাই কোর্টের রায়, মানি না মানব না’, ‘সংবিধানের মূলকথা সুযোগের সমতা’, মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা সুযোগের সমতা’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘একাত্তরের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ বলে স্লোগান দেন।

ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ : গতকাল সকাল ১০টায় কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ বহাল রাখার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই’, ‘বৈষম্য মানি না মানব না’, ‘কোটার বিরুদ্ধে লড়াই হবে লড়াই চাই’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

আপিল বিভাগে আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের : সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ঠিক করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বার জজ আদালত। গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এমন পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রায় দেন হাই কোর্ট। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ জুন কোটা পুনর্বহাল করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।

সর্বশেষ খবর