শিরোনাম
সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিআইডিতে তদন্ত থেমে আছে ১১৬ মামলার

হত্যা ধর্ষণ চাঁদাবাজি ডাকাতি জালিয়াতি

মাহবুব মমতাজী

উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ১১৬ মামলার তদন্ত থেমে আছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, বোমা হামলা, জালিয়াতিসহ সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর এমন অপরাধের ঘটনায় হওয়া মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। পুলিশ বলছে, সিআইডিতে মামলা আসার পরপরই তদন্ত বন্ধ রাখতে আসামি পক্ষ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেয়। স্থগিতাদেশ থাকায় এসব মামলার তদন্তকাজ থেমে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব মামলা সুরাহায় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকায় ভুক্তভোগীরা বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন।

এসব মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ওইসব মামলার স্থগিতাদেশের তালিকা সিআইডি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে দিয়েছেন কি না তা আমার জানা নেই। আর আমি মানি লন্ডারিং মামলাগুলো দেখি। এসব বিষয় এলে আমি সংশ্লিষ্ট কোর্টে শুনানি করি।

সিআইডি সূত্র জানায়, চলতি বছরের মে মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- রাজধানীসহ সারা দেশে এ ধরনের মামলার সংখ্যা ১১৬। এর মধ্যে সিআইডির ঢাকা মহানগর ও আশপাশে ৫০টি, ফরিদপুরে ৪টি, চট্টগ্রামে ১৩টি, সিলেটে ৬টি, খুলনায় ১০টি, যশোরে ৬টি, বরিশালে ৫টি, রাজশাহীতে ৬টি, রংপুরে ৩টি, কুমিল্লায় ১টি ও ময়মনসিংহে ৭টি মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে মোবাইলফোনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো দেখে বলতে হবে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত থেমে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার একটি মামলা আছে। এই মামলা ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হয়েছিল। মামলায় অভিযোগ করা হয়, পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির প্রোপজড সাবস্ক্রাইবার হিসেবে কাজকর্মে নিয়োজিত থাকাবস্থায় অন্যান্য শেয়ার হোল্ডারদের ঠকিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ। প্রায় ২৬ বছরেও এই মামলার বিচার শেষ হয়নি। ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর শরীয়তপুরের পালং থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, সরকারি জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা। দুই যুগেও এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। ২০০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাবনার সুজানগর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। এটিও এখনো থেমে আছে।

এদিকে সিআইডি সূত্র বলছে, ১৯৮৯ সালের ২১ জুলাই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট শালবনের কাছে সাত বছর বয়সি শিশু জয়নুবুন নাহারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় শিশুটির সৎভাই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত পায় সিআইডি। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মামলার বাদী নুরুল ইসলামসহ চারজন মিলে সম্পত্তির লোভে শিশুটিকে কুপিয়ে হত্যা করেন। পুলিশ ওই চারজনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। নুরুল ইসলামের লোকজন বুঝতে পারেন, তাদের সাজা হবে। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৯৮ সালের ৯ মার্চ হাই কোর্ট থেকে ওই মামলার স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মে মাসে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া স্থগিত থাকা মামলাগুলোর আইনি জট নিরসনের জন্য প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। দ্রুতই এসব মামলায় তদন্তে গতি আসবে বলে আশা করছেন তারা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জুয়েল মুন্সী সুমন এ প্রতিবেদককে জানান, জর্জ কোর্টের কোন মামলায় আইনগত প্রসিডিউর ঠিকমতো পালন হয়নি, এমন ডুকুমেন্টারি কোনোকিছু পেলেই আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তা স্থগিত করে দেন। যেসব মামলা থানায় দায়ের হয় এগুলো পরিচালনায় থাকেন রাষ্ট্রপক্ষ। যখন উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিত হয় তখন রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করার জন্য কোনো তদবিরকারক থাকেন না। তখনই মামলাটি ঝুলে যায়। অর্থাৎ আসামি পক্ষ শক্ত অবস্থানে থাকে, আর বাদীর কোনো তদবির থাকে না বলেই এমন হয়। তবে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এমন ঝুলে থাকা মামলা সাল অনুসারে ক্রমান্বয়ে শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তি করে দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর