সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

লোককাব্যের সুরসুধা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

লোককাব্যের সুরসুধা

বাউল, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারিসারির সুরে সিক্ত আবহমান বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর। আর সেই সুরের সঙ্গে ছড়িয়ে রয়েছে নাম না জানা অনেক সাধক, মহাজনদের কীর্তি। যথাযথ প্রচার ও সংরক্ষণের অভাবে কীর্তিমান এসব সাধক-মহাজনের বেশির ভাগই হারিয়ে গেছে স্মৃতির অতলে, কালের গর্ভে। শিল্পের  প্রসার ও লোককাব্যের নানান ধারা এবং সুর সংরক্ষণে কাজ করছে শিল্পকলা একাডেমি। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ২০ জন সাধক ও সুগায়কের পদ নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো প্রশিক্ষণোত্তর পরিবেশনা ‘লোককাব্যের সুরসুধা’। গতকাল বিকালে চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত হয় এই সুরের আসর।

ফরিদপুরের জালাল বয়াতির গান ‘তুমি রাখ কিবা মারো তরী, যায় না যেন ডুবিয়া’ গানটির দলীয় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আসর শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিক পরিবেশনায় হবিগঞ্জের বাউল শেখ ভানুর ‘এই পোড়া পরাণে সখী জ্বালা বারন হয় না’ পদাবলি পরিবেশন করেন শাহনাজ বেলী; পলাশ চন্দ্র শীল পরিবেশন করেন গোসাই জগদিশের ‘দেহে থাকিতে কূরসের জোস, সুরস উদয় হবে না’; কবিয়াল রসিক সরকারের পদাবলি ‘যার সুরের মায়ায় হৃদ মোহলায় জাগায় ঊষার আলো’ পরিবেশন করেন মুক্তা সরকার; আবদুর রহিম ফকিরের ‘হজ করো মন এই বেলায় খোদে খোদার হুজুরি কাবায়’ পরিবেশন করেন তৌহিদুল আলম, শরীয়তপুরের দলিল উদ্দিন বয়াতির ‘নিশিনা রাতে স্বপন দেখিয়া উঠিলাম চমকিয়া’ গেয়ে শোনান মোহছেন আরা বেগম, দেওয়ান রশিদের ‘অচিন চিনবি যদি আয়গো তোরা আয় সকলে’ পদাবলি পরিবেশন করেন সিদ্দিকুর রহমান।

শিল্পকলায় মঞ্চায়ন ‘মাংকি ট্রায়াল’: শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে চলছে বাতিঘর নাটকের দলের তিন দিনের উৎসব। গতকাল উৎসবের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় দলটির নিজস্ব প্রযোজনার নাটক ‘মাংকি ট্রায়াল’।

বিদেশি নাট্যকার জেমস লরেন্স এবং রবার্ট এডউইন লির যৌথভাবে রচিত  ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে ‘মাংকি ট্রায়াল’ নাটকটির রূপান্তর ও নির্দেশনায় ছিলেন মুক্তনীল। ১৯২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিজ্ঞান শিক্ষকের সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ নিয়ে ডারউইনের থিওরিটি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন রাজ্যের হিলসবোরো শহরের একটি পাবলিক স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক বার্ট্রাম কেইটস। যিনি তৎকালীন বাটলার আইন উপেক্ষা করে ছাত্রদের সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ সম্পর্কিত ডারউইনের থিওরি শেখানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তৎকালীন প্রতিক্রিয়াশীলরা ক্রোধে ফেটে পড়েন।

রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করার দায়ে জেলখানায় বন্দি করা হয় বিতর্কিত সেই বিজ্ঞান শিক্ষককে। বাটলার আইন এমন এক রাষ্ট্রীয় আইন যা পাবলিক স্কুলের শিক্ষকদের স্কুলের ক্লাসে সৃষ্টিবাদের পরিবর্তে বিবর্তনবাদ শেখানো নিষিদ্ধ করে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ম্যাথিউ হ্যারিসন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী হেনরি ড্রামন্ডের বিবিধ যুক্তিতর্কের উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে মামলাটি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, যা ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বিচার প্রক্রিয়াটি বিবর্তনের সত্যতা নিয়ে একটি জাতীয় বিতর্কের সৃষ্টি করে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে জনসাধারণের সামনে আনতে সাহায্য করেছিল। মামলাটি মিডিয়ায় তীব্রভাবে আলোচিত হয় এবং পুরো বিশ্বের নজর কাড়ে। এভাবেই এগিয়ে যায় কাহিনি। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় সরকার মুক্তনীল, খালিদ হাসান রুমি, সঞ্জয় গোস্বামী, সাদ্দাম রহমান, মৃধা অয়োমী, তারানা তাবাসসুম চেরী, স্বরণ বিশ্বাস, সঞ্জয় হালদার প্রমুখ। আজ শেষ হচ্ছে তিন দিনের এই উৎসব।

সর্বশেষ খবর