সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
টিআইবির বিশ্লেষণ

উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৭৯ শতাংশই ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চার ধাপে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের প্রায় ৭৯ শতাংশই ব্যবসায়ী। এর মধ্যে ১৩২ জন বা ৩০.৪১ শতাংশ চেয়ারম্যানই কোটিপতি। ৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে সংসদ সদস্যদেরও পেছনে ফেলেছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। গতকাল ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে যে হওয়ার কথা সেটি আসলে বাস্তবে নেই। এখন ক্ষমতাকেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিত্ব। ক্ষমতায় থাকতে পারলে সম্পদ বিকাশের অবাধ সুযোগ পান।

হলফনামার বিস্তারিত তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের সব ধাপে ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট অক্ষুণ রয়েছে বলে মনে করে টিআইবি। তাদের তথ্যমতে, নির্বাচিতদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের হার ৫ বছরে বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ; চেয়ারম্যানদের প্রায় ৭৯ শতাংশই ব্যবসায়ী।

টিআইবি জানায়, গত ৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে সংসদ সদস্যদেরও পেছনে ফেলেছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। গত ৫ বছরে একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ। যেখানে ঝালকাঠি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমানের সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। ২০১৯ সাল থেকে শতভাগ বা তার বেশি সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া ১৯১ জন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

গত ৫ বছরে একজন জনপ্রতিনিধির আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৯০০ শতাংশ। এ সময়ে জনপ্রতিনিধিদের স্ত্রী অথবা স্বামী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।

অথচ এরই মধ্যে প্রার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশ তাদের আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। করযোগ্য আয় না থাকাটা অবিশ্বাস্য মনে হবে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধির ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশাল সম্পদের বিকাশ ঘটেছে। একেবারে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত সম্পদের এ বিকাশ ঘটছে। এসব দেখার জন্য রাজস্ব বোর্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনেরও দায়িত্ব আছে।

টিআইবির বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বছরে ১০ লাখ টাকা আয় করেন এমন নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ২৮০ জন। চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৫১ শতাংশ বছরে ১০ লাখ টাকা আয় করেন। বছরে ১ কোটি টাকা আয় করেন এমন নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ৪০ জন। এর মাঝে দুজন ভাইস চেয়ারম্যান আর বাকিরা সবাই চেয়ারম্যান। গত ৫ বছরে প্রায় তিন গুণের বেশি বেড়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা। কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে ৭.১৩ শতাংশ বা ৩৯০ প্রার্থীর। নির্বাচিতদের মধ্যে ১৫০ জন বা ১২.৩৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি। চেয়ারম্যানদের মধ্যে ১৩২ জন বা ৩০.৪১ শতাংশ কোটিপতি।

গত ৫ বছরে ১ কোটি টাকার ওপরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৫১ জন। আর ১০ বছরে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৪১ জন। দেশের মধ্যাঞ্চল, কুমিল্লা-ফেনী অঞ্চল ও খুলনা অঞ্চলে প্রার্থীদের গড় আয় ও অস্থাবর সম্পদ বেশি। বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা অঞ্চলে প্রার্থীদের গড় অস্থাবর সম্পদ ৫ বছরে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে।

এদিকে, আইন অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে ভোটের বিধান থাকলেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটে মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ৫৪ জন স্বজন অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া, বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মোট ১৩১ উপজেলায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এতে বহিষ্কৃত হয়েছেন ২০১ জন।

সর্বশেষ খবর