মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কনস্টেবল হত্যায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুলিশ সদস্যের আচরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ খুনের রহস্যের জট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কেন হঠাৎ সহকর্মীর ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালেন, এ প্রশ্নের জবাব বের করতে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে গ্রেফতারকৃত কনস্টেবল কাউসারকে। তবে এখনো সঠিক কোনো কারণ তদন্তকারীরা জানতে পারেননি। এদিকে পাবনার মানসিক হাসপাতালে তিনবার চিকিৎসা নেওয়া পুলিশ কনস্টেবল কাউসারের ঘাড়ে কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক পুলিশ সদস্য আরেক পুলিশ সদস্যের বুকে অস্ত্র তাক করে একের পর এক গুলি করছেন, যার নৃশংসতা হার মানাবে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও।

এমন আচরণের কী কারণ হতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি গতকাল বলেন, পুলিশের গুলিতে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার মূল মোটিভ কী এবং এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক প্রশ্নই সামনে আসছে। এ ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। এমন আচরণের কী কারণ হতে পারে।’ পুলিশ বলছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন কনস্টেবল মো. কাওসার। তবে তার পরিবারের প্রশ্ন, মানসিক রোগী কাওসারের হাতে অস্ত্র দেওয়া হলো কেন? অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না পুলিশ প্রশাসন। সঠিক কাউন্সিলিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে এমন ঘটনাকে আর বিচ্ছিন্ন বলার সুযোগ থাকবে না। এ ঘটনায় গুলশান বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলেছেন।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কাওসার ২০০৫ সাল থেকে চাকরি করছেন। তার মানসিক সমস্যার কথা যদি পুলিশের কাছে কোনোভাবে আসত, তবে আমরা চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তার শারীরিক এবং মানসিক যোগ্যতা আছে কি না সেটি দেখতাম। কিন্তু তিনি স্বাভাবিকভাবেই ডিউটি করতেন। তাই এ নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো প্রশ্ন আসেনি।

পুলিশ কনস্টেবল কাওসার আহমেদ মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বাড়িতে তার বাবা-মা ও স্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন- সব জেনেও তার হাতে অস্ত্র দিয়েছে কেন? তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অসুস্থ থাকায় চাকরিতে যেতে চাইত না কাওসার। তার চিকিৎসাও করেছে পুলিশ।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কাওসারের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। দৌলতপুর ইউনিয়নের দাড়েরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলীর ছেলে তিনি। অজোপাড়াগাঁয়ে বড় হওয়া কাওসার পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে পিতার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি শুরু করেন ২০০৫ সালে। বিয়ে করেন চাকরির পরের বছরই। বিয়ের বছর তিনেক পর থেকে কাওসার মানসিক ভারসাম্যহীন আচরণ শুরু করে। কাওসারের ভাই কৃষক মাসুদ রানা বলেন, চাকরিতে ঢুকে কাওসারের মানসিক সমস্যা হয়। চাকরি থেকে পালিয়ে গ্রামে চলে এসেছিলেন। বাড়িতে এসে ভাঙচুরও করেছিলেন। পরে তাকে বেঁধে পুলিশের সহায়তায় পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে। তাকে তিনবার পাবনায় ও দুবার কুষ্টিয়াতেও মানসিক রোগের চিকিৎসা করানো হয়েছিল বলে জানান মাসুদ। কাওসারের মা মাবিয়া খাতুন বলেন, পুলিশে যোগ দেওয়ার পরই সঙ্গদোষে জড়িয়ে পড়েন মাদক সেবনে। চাকরির পাঁচ বছরের মাথায় ২০১০ সালের দিকে কাওসারের মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। ১৪ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত সে। কয়েকবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে তাকে। কাওসারের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, কাওসার মাদক নিলে টাকা পাঠাতে পারতেন না। আমাকে ও আমার সন্তানের জন্য ও প্রতি মাসে ১০ হাজার করে টাকা পাঠান। কাওসারের দুই সন্তান আছে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, সহকর্মীর গুলিতে নিহত কনস্টেবল মনিরুলের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের পরিবেশ। নিজ গ্রামের ঈদগাহ মাঠে জানাজায় অংশ নিয়েছেন গ্রামের শত শত মানুষ। স্বজনসহ এলাকাবাসীর দাবি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। গতকাল সকাল ১০টায় স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে ভোর রাতে নিহত মনিরুলের গ্রামের বাড়ি আটপাড়া উপজেলার স্বরমশিয়া ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে নিয়ে আসা হয় লাশ।

সর্বশেষ খবর