মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
নাগরিক প্ল্যাটফরমে বিশিষ্টজনরা

বাজেট দুর্নীতি সহায়ক ফাঁকা বুলির

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘উচ্চাভিলাষী ফাঁকা বুলি, বৈষম্যমূলক, সংবিধান পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। এ ছাড়াও এটিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থহীন শুভঙ্করের ফাঁকিতে ভরপুর বাজেট বলেও মন্তব্য করেছেন। বলেছেন দুর্নীতি সহায়ক ও অনৈতিকতার বাজেট ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিপন্থি। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক জবাবদিহিহীন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। গতকাল রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি : অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি শীর্ষক ব্রিফিংয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউরোপিয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-নাগরিক প্ল্যাটফরম এ মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।

নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ওয়াটার এইড দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. খায়রুল ইসলাম, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় শিক্ষা ও অর্থনীতি অনুষদের ডিন ড. এ কে এম এনামুল হক, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, পলিসি একচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাশরুর রিয়াজ এবং লেখক ও কলামিস্ট ইলিরা দেওয়ান। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি। এটি বে-নজির বাজেট। আমরা কোথাও কোনো স্বস্তি দেখি না। চলমান সময়ে পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সুরক্ষা দিতে আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া জ্বালানি, ব্যাংক এবং পুঁজিবাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখা যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত নেই এবং আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না। আপনি সৎভাবে উপার্জন করে ৩০ শতাংশ কর দেবেন, আমি অনৈতিকতার সঙ্গে দুর্নীতিনির্ভর চোরাচালানি, দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকে সম্পদের মালিক হব। আর আমাকে বলবেন কিছুই লাগবে না শুধু নামমাত্র ১৫ শতাংশ কর দেবেন। এটা পরিষ্কারভাবে বৈষম্যমূলক। তিনি আরও বলেন, এসব অপরাধের জন্য যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। অপরাধের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিককে বিচারের আওতায় আনার কথা সেখানে সরকার পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছে প্রশ্নও তোলা যাবে না। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতি বাজেটে এ সুযোগটা দেওয়া হয়েছে। এবারেরটা হচ্ছে আরও ব্যতিক্রম। করের ১৫ শতাংশের সঙ্গে আইনগতভাবে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব প্রধানসহ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং খুব লম্পঝম্প করে তদন্ত পরিচালনা হচ্ছে। তারা যদি বলে আপনি কোন আইনের ওপর ভিত্তি করে আমার দুর্নীতি তদন্ত করবেন। কারণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছে, আইনগতভাবে আমাকে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। এ প্রশ্নের তো উত্তর নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যারা দুর্নীতি করছে তাদের পুরস্কৃত এবং লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। সারা বছর অপরাধ, দুর্নীতি করার পর বছর শেষে রাষ্ট্র তাদের ক্লিন সার্টিফিকেট দেবে। অনেকে আবার শুদ্ধাচার এবং সেরা করদাতার পুরস্কারও পেয়ে যাবেন। এই সীমারেখার মধ্য থেকেও। প্রকারান্তে দেশবাসীকে বলা হচ্ছে তোমরাও কিন্তু এ পথ অনুসরণ করিও। নৈতিকতার ভিত্তি ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সেটার সর্বোচ্চ রূপ আমরা দেখছি। হয়তো সামনে চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাব।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পর সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিনিময় মূল্য কি রাষ্ট্র উপলদ্ধি করে। বিনিময় মূল্য হচ্ছে আমাদের নৈতিকতা। ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকার জন্য বাংলাদেশ থেকে নৈতিকতা উৎখাত হবে। এমন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। এটা তো হওয়ার কথা নয়। স্বাধীনতার ধারক ও বাহক বর্তমান সরকার। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুন্দর সুন্দর কথা আছে। বিএনপির ইশতেহারেও এমন কথা থাকে। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণার পাশাপাশি পরিষ্কারভাবে বলা আছে। যারা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করবে এ অর্থ সরকার তা বাজেয়াপ্ত করবে এবং এভাবে যারা অর্থ উপার্জন করবে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকার আসলে জনগণকে কি বলছে আমাদের কোনো কথা তোমরা বিশ্বাস করবে না। একদিকে এ কথা বলছে, অন্যদিকে বলছে তোমরা চুরি, চামারি, জোচ্চুরি বাটপারি যত আছে তত কর। অনিয়ম কর, দুর্নীতি কর।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ঋণ খেলাপির পথ প্রদর্শক, ব্যাংক জালিয়াতি লুটপাটের পথ প্রদর্শক, কর ফাঁকির পথ প্রদর্শক, অর্থ পাচারের পথ প্রদর্শক তারা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় অন্যতম শক্তিশালী পক্ষ। তারা নির্ধারণ করে দেয় ব্যাংক খাত কীভাবে উদ্ধার করা যাবে। তাহলে কি কোনো দিন ব্যাংক খাত উদ্ধার হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কি সেটা করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কি সেটা করে। এটা যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাই খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়ার পথ প্রদর্শক।’

 

সর্বশেষ খবর