বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিলেটে টিলা কেটে ভয়ংকর বসবাস

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে টিলা কেটে ভয়ংকর বসবাস

সিলেট মহানগরীর চামেলীবাগে টিলায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট মহানগরীর চামেলীবাগ এলাকায় টিলা ধসে মারা গেছেন একই পরিবারের তিন সদস্য। এ দুর্ঘটনার পর সিলেটজুড়ে এখন আলোচিত হচ্ছে টিলার নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস নিয়ে। চামেলীবাগ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন সিটি মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক। ১৯৯৭ সালে একই টিলা ধসে নিহত হয়েছিলেন আরেক যুবক। আহত হয়েছিলেন আরও কয়েকজন। ওই সময়ও একইভাবে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখেছিলেন স্থানীয়রা।

টিলা ধসে যখনই কোনো  দুর্ঘটনা ঘটে তখন তৎপর হন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কয়েক দিন পার হলেই স্বাভাবিক হয়ে আসে সবকিছু। আবারও টিলা কাটেন প্রভাবশালীরা। শুরু হয় টিলা কেটে আবাসনের কাজ। টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের বেশির ভাগ নিম্নবিত্ত হওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও তাদের স্থানচ্যুত করতে পারে না। মৃত্যুর ঝুঁকি সঙ্গী করেই পড়ে থাকেন তারা টিলার ভাঁজে। আর প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে সতর্কতার একটি নোটিস জারি করে দায় সারেন কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সরেজমিন চামেলীবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টিলা ধসে মারা যাওয়া মো. করিম উদ্দীনের বাসার পাশে আরও চারটি পরিবারের ঘর রয়েছে ঝুঁকিতে। টিলার মাটি ধসে চারটি ঘরের ওপর ঠেস দিয়ে আছে। টিলার উল্টর-পূর্ব পাশের কয়েকটি বাসাও অনেকটা ঝুলে আছে টিলার ওপর। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখনো চামেলীবাগ এলাকায় অন্তত ১৭টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। একই ওয়ার্ডের বহর আবাসিক এলাকায় টিলার নিচে ঝুঁকিতে আছেন ৭০-৮০টি পরিবার। এ ছাড়া সৈয়দপুর, জাহানপুর, আলুরতল এলাকায়ও টিলা কেটে অসংখ্য বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। সিলেট মহানগরীর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে টিলা রয়েছে। প্রায় প্রতিটি টিলা কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি। মহানগর ছাড়াও জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় টিলার সংখ্যা বেশি। অনেক উপজেলায় টিলার মালিকরা মধ্যস্বত্বভোগী ঠিকাদারদের কাছে মাটি কাটার দায়িত্ব দিয়ে দেন। ওই ঠিকাদাররা তাদের নিজ দায়িত্বে টিলা কেটে মাটি নিয়ে যান। সেই মাটি বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে বিক্রি করেন। টিলা কাটার জন্য প্রশাসন ‘ম্যানেজ’ও করেন তারা। আবার কোনো কোনো মালিক নিজ দায়িত্বে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে থাকেন। মাটি কাটার পর টিলার স্থানে গড়ে তোলা হয় আবাসন।

এ ছাড়া গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন স্থানে টিলা কেটে মাটির নিচ থেকে তোলা হয় পাথর। এ ক্ষেত্রে পাথরখেকোরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে টিলা ইজারা নেন। টিলা কেটে তারা পাথর উত্তোলনের পর পুনরায় জায়গা মালিককে বুঝিয়ে দেন। এই লোভে পড়ে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের অনেকে তাদের টিলা পাথরখেকোদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। দিনরাত এসব টিলা কেটে চলছে পাথর উত্তোলন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, চামেলীবাগ ট্র্যাজেডির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) হোসাইন মো. আল জুনায়েদকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় টিলার পাদদেশে যারা অবস্থান করছেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ টিলাগুলোতে লাল পতাকা উড়িয়ে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর