বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিয়ানমার থেকে স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ

পাঁচ দিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমার থেকে স্পিডবোট লক্ষ্য করে আবারও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। মঙ্গলবার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে রোগী বহনকারী স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সকাল ১০টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রাকালে নাফ নদের মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বোট মালিক সমিতির সেক্রেটারি ছৈয়দ আলম জানান, টেকনাফ থেকে চিকিৎসা শেষে সেন্টমার্টিন ফেরার পথে একটি স্পিডবোট লক্ষ্য  করে গুলি ছোড়া হয় মিয়ানমার থেকে। আগে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে গুলি ছুড়লেও গতকাল ডিঙিতে এসে নদীতে নেমে গুলি বর্ষণ করে। এ সময় স্পিডবোটে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে তারা সেন্টমার্টিনে নিরাপদে পৌঁছান।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি সকল পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে। ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে রবিবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়েছে।

এর আগে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে সেন্টমার্টিনগামী পণ্যবাহী ট্রলার এবং বাংলাদেশের নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছিল। ওই এলাকাটি বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ গোষ্ঠীর সদস্যরাই গুলি ছুড়েছে বলে ধারণা।

পাঁচ দিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন, খাদ্য সংকটের শঙ্কা : মিয়ানমার থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় পাঁচ দিন ধরে বন্ধ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের নৌ যোগাযোগ। ফলে বন্ধ রয়েছে খাদ্যসহ নিত্যপণ্য পরিবহন, এমনকি জরুরি যাতায়াতও। মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বসবাস করে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। গত ৫ জুন নির্বাচন শেষে ফেরার পথে নাফ নদের মোহনায় নির্বাচনি কর্মকর্তাদের বহনকারী ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়া হয়। এরপর আরও কয়েকদফা একইভাবে ছোড়া হয় গুলি। ফলে ৭ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল। পাঁচ দিন ধরে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ থাকায় জরুরি যাতায়াতসহ নিত্য ও খাদ্যপণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না দ্বীপে। কেননা, গুদাম না থাকায় প্রতিদিন টেকনাফ থেকেই এসব পণ্য নিয়ে যেতে হয় সেন্টমার্টিনে। সেন্টমার্টিনবাসী বলছেন, কাঁচা তরকারি ও ওষুধসহ আরও নিত্যপণ্য যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। কোস্টগার্ড যদি তাদের শেল্টার দিত, তাহলে তারা সপ্তাহখানেক টেকনাফে যাতায়াত করতে পারতেন। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটের শঙ্কা বেড়েছে। তবে সংকট নিরসনে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলছে প্রশাসন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, নাফ নদের মোহনায় ঘটনাগুলো ঘটছে। আমরা চেষ্টা করছি বিকল্প রুট ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানোর। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। তাতে টেকনাফসহ সীমান্ত এলাকায় প্রায়ই এসে পড়ছে গুলি-বিস্ফোরক।

সর্বশেষ খবর