বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

একক সিদ্ধান্তে ১৫২ কোটি টাকা সুদ মওকুফ

কর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

একক সিদ্ধান্তে চারটি মোবাইল অপারেটরের সুদ মওকুফ করায় মূসকের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিজের ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে চারটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়ে রাষ্ট্রের ১৫২ কোটি টাকা ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম শেখ। দুদক সচিব বলেন, মূসকের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক সিদ্ধান্তে চারটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দিয়েছিলেন। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সাবেক কমিশনার একক নির্বাহী সিদ্ধান্তে গ্রামীণফোন লিমিটেড, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা অপরিশোধিত সুদ মওকুফ করেছেন।

এ সময় সাংবাদিকরা মোবাইল কোম্পানিগুলো সাবেক কমিশনারকে ঘুষ দিয়ে এই সুবিধা নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে দুদকের সচিব বলেন, এ বিষয়গুলো তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চারটি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়াটেলের ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা অপরিশোধিত সুদ মওকুফ করেন ওয়াহিদা। এর মধ্যে ৬টি নথিতে গ্রামীণফোনের ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৭ টাকা; ৭টি নথিতে বাংলালিংকের ৫৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫১ টাকা, রবির ১৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৮৮ টাকা ও এয়ারটেলের ২০ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৫২ টাকা সুদ মওকুফ করেন তিনি। এতে বলা হয়, ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী আইন বহির্ভূতভাবে অসৎ উদ্দেশে একক নির্বাহী সিদ্ধান্তে ১৬টি নথিতে ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা অপরিশোধিত সুদ মওকুফ করেন। এর মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে আত্মসাৎ দন্ডবিধির ২১৮/৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।

জানা যায়, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট আদায় সংক্রান্ত স্থান ও স্থাপনার ওপরে আইনানুগভাবেই ভ্যাট প্রযোজ্য হওয়ায় তা মেনে নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দাবি করা ভ্যাট পরিশোধের বিষয়ে অল্টারনেটিভ ডিসপুট রেজুলেশন সভায় সম্মত হয় এবং যথাসময়ে ১৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার ৪৩০ টাকা পরিশোধ করা হয়। এই রাজস্ব নির্ধারিত কর মেয়াদে পরিশোধ না করায় মূসক আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য হারে প্রদেয় সুদের পরিমাণ হয় ১৫২ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯০ টাকা।মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৭(৩) অনুসারে সুদ আদায়ের জন্য নথি উপস্থাপন করা হলে তৎকালীন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী অতিদ্রুত সুদের হিসাব করার নির্দেশ প্রদান করেন। ১৫২ কোটি টাকা সুদ আইনানুগভাবে আদায়যোগ্য ছিল। কিন্তু কমিশনার কিছু যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে একক নির্বাহী আদেশে অসৎ উদ্দেশে সুদ আদায় করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এর ফলে সরকারের ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা আদায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর