কোরবানির পশুর কৃত্রিম সংকট ঠেকানো, চামড়া ও পশু কেনাবেচায় ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং পশুবাহী যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবার সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নজরদারি করা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখা, সড়ক-নৌ-রেলপথে দুর্ঘটনা হ্রাস, রেলে শিডিউল বিপর্যয় রোধ, সহজে টিকিট প্রাপ্তিসহ সব ধরনের ভোগান্তি ও হয়রানি বন্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা, পুলিশ মহাপরিদর্শক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএর প্রতিনিধি, বিভিন্ন দফতর/সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সড়কপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহকে নিজেদের মধ্যে আন্তসমন্বয়ের মাধ্যমে সব কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটসমূহে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের দায়িত্বশীল জনবলের উপস্থিতি ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করবেন। মহাসড়কের পাশে কিংবা যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট স্থাপনের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তদফতর সমন্বয়ে নিশ্চিত করতে হবে। এফবিসিসিআই ও বিজেএমইএ তাদের কর্মীদের একত্রে ছুটি না দিয়ে ধাপে ধাপে দেবে। রেলযাত্রা, রেলের টিকিটপ্রাপ্তি এবং শিডিউল রক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে টিকিট প্রাপ্তিতে যে কোনো ধরনের ভোগান্তি, হয়রানি, প্রতারণারোধে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নৌ-যানসমূহে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নৌ-যানসমূহের ফিটনেস নিশ্চিত করতে হবে। লঞ্চ, ফেরি ও নৌ-ঘাটসমূহের নিরাপত্তা, যাত্রীবান্ধব ঘাট ব্যবস্থাপনা এবং টিকিটপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিমানযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাসমূহ বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল বাড়াবে।এ ছাড়া সভায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ব্যবস্থাপনা, অনলাইন মার্কেট মনিটরিং, ঈদযাত্রা, কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ ফিরতি যাত্রাসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও আন্তদফতর নিবিড় সমন্বয়, ঈদপূর্ব সময়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্যনিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর যথেষ্ট জোগান রয়েছে। উদ্বৃত্ত পরিমাণ কোরবানির পশুর সরবরাহ থাকায় কোনো সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, কোরবানির পশুর হাটসহ পশু পরিবহন, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা এবং যে কোনো ধরনের প্রতারণারোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির বিষয়ে যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে প্রত্যক্ষ ও সরেজমিন তত্ত্বাবধানে স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে হবে এবং পূর্ব থেকেই পরিকল্পনামাফিক পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বর্জ্য পরিবহনকারী গাড়িসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণসহ চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয় সার্বিকভাবে বিবেচনা করে স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবে।