বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

শিডিউল বিপর্যয়ে ট্রেনযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিডিউল বিপর্যয়ে ট্রেনযাত্রা

ঈদুল আজহার আর বাকি মাত্র তিন দিন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। বিশেষ করে আজ থেকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় হবে বেশি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ পালনের কথা ভেবে আনন্দ জাগলেও ভয় বাড়াচ্ছে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথ এবং মহাসড়কের যানজটপ্রবণ বিভিন্ন পয়েন্ট। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরের ঈদযাত্রায় এবারও যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

এরই মধ্যে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার যানবাহনের চাপে ধীরগতিতে চলছে। এ ছাড়া রেলপথে গতকাল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি বাড়ে ঘরমুখো মানুষের। ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম মাধ্যম সড়কপথ। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়কের অর্ধশত স্পটে হাটবাজার ও পশুর হাট। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের মূল শ্রোত শুরু হওয়ার আগেই ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চন্দ্রা, এলেঙ্গা, যমুনা সেতু, কড্ডা, হাটিকুমরুল মোড় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকু  এলাকায় যানজট শুরু হয়েছে। কয়েকটি স্পটে এখনো দীর্ঘ সময় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। এ অবস্থায় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার বেশ উন্নয়নের পরও ঘরমুখো মানুষের জন্য যানজটে ভোগান্তি থাকছেই।

বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২০ কিমি যানজট : গতকাল সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলি সেতু পার হয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কমতে থাকে। সবশেষ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত তীব্র যানজট না থাকলেও থেমে থেমে গাড়ি চলছিল।

সরেনি সড়কের পাশে ২১৭ পশুর হাট : সারা দেশে সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী পশুর হাটের কারণে যানজট তৈরি হয়। সড়ক ও মহাসড়কের পাশে ২১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় সড়ক সংলগ্ন ৩০টি হাট, কক্সবাজার জেলায় ২৩টি, ঢাকা জেলায় ১৫টি, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৩টি, নাটোর জেলায় ১২টি, গাজীপুরে ১১টিসহ প্রতিটি জেলায় হাট রয়েছে।  এগুলো সরাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলেও একটা হাটও সরেনি। যেগুলো সড়ক-মহাসড়কে যানজট তৈরি করছে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, আজ (গতকাল) পর্যন্ত সব ধরনের প্রস্তুতি ও সভার কাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা প্রতিপলন হবে আশা করি। বিগত বছরগুলো থেকে এবার আমাদের প্রস্তুতি ভালো। আশা করি এবার ঘরমুখো মানুষদের নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারব। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের সড়ক এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু এবং সেতু থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত আমাদের স্পেশালি নির্দেশনা রয়েছে। তবে এখানে গাড়ির যে ধীরগতি হয় সেটা যানজট বলা যাবে না। কারণ বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় পাশে সড়কটি ছয় লেনের আর সেতুটি চার লেনের হওয়ায় এখানে এসে একটু চাপে পড়ে। তবে সেতুতে যানজট ও দুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের পাশে পশুর হাট সম্পর্কে তিনি বলেন, সড়কের পাশে পশুর হাট না বসাতে নির্দেশনা থাকলেও বসেছে পশুর হাট। যেহেতু অনেক পুরনো এই হাটগুলো সে জন্য সরাতে একটু সময় লাগবে। তবে নির্দেশনা দেওয়া আছে হাট যেন সড়ক পর্যন্ত না আসে।

ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় : ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে রাজধানীর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেন। গতকাল সকাল থেকেই সব ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ে নির্ধারিত সময়ের দেড় থেকে ২ ঘণ্টা দেরিতে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। গতকাল দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করেছে। পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৪০ মিনিট, সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস দেড় ঘণ্টা, চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কমিউটার পৌনে ৯টায়, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে ছেড়ে যায়।

ঈদ স্পেশাল ট্রেন ‘দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল’ এক ঘণ্টা, জামালপুর এক্সপ্রেস সকাল ১০টায়, পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল থাকলেও বিপর্যয়ে পড়েছে সে শিডিউলে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের শিডিউলে বিলম্বের প্রভাব পড়েছে অন্য ট্রেনগুলোতে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনগুলো ১০-২০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনো ট্রেন দেরিতে আসে তাহলে ট্রেনগুলো এখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। কারণ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং, ওয়াটারিং করা হয়। এজন্য প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে।

যানজটে ভোগান্তি এড়াতে পুলিশের নির্দেশনা : ঈদযাত্রায় ঢাকা মহানগরের লোকাল বাসগুলো কোনোভাবেই যাত্রী নিয়ে ঢাকার বাইরে যেতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান। তিনি বলেন, অনেক সময় তাদের আটকানো না গেলেও ভিডিও দেখে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। ঈদের পরে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার। তিনি বলেন, ঈদে রুট পারমিট ছাড়া কোনো যানবাহন চলবে না। সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনাল ঘিরে যাতে যানজট না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যানবাহনের ছাদে যাত্রী ওঠানো যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর