শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বছরে লোকসান ১৯ হাজার কোটি

সরকারি এক ডজন প্রতিষ্ঠান চলছে লসে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারি ৪৯টি অআর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি চলছে লোকসানে। এক বছরে এই এক ডজন প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ১৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য নিয়ে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এ হিসাব তুলে ধরেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন অআর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের দায় মেটাতে বছর বছর সরকারকে অনুদান, ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাতেও লোকসান কমছে না। বরং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৪৯টি অআর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোকসান বাদ দিয়ে নিট মুনাফা ছিল ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকা প্রায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট মুনাফা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এরপর থেকেই নিট লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান লোকসান করে, যার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের লোকসান বেড়ে ১৯ হাজার ১৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক বছরে লোকসান বেড়েছে ৩ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন অআর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এটি অবশ্য গত অর্থবছরের তুলনায় কম। গত অর্থবছরে এই এক প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা প্রায়। লোকসানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবি। এই প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল ১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ লোকসানি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (বিআরইবি), যার লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানের লোকসান ছিল ১ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। চতুর্থ শীর্ষ লোকসানি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি)। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ৮৭৫ কোটি টাকা থাকলেও এ বছরে বেড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা হয়েছে। লোকসানি অন্য অআর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বিটিএমসি, বিএসএফআইসি, বিজেএমসি, বিআইডব্লিউটিসি, বিআরটিসি, আরডিএ, বিএফডিসি (ফিল্ম) ও বিআইডব্লিউটিএ। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, শীর্ষ চার লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ব্যতীত বাকি তিন প্রতিষ্ঠানের লোকসান বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টিসিবির লোকসানের পরিমাণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিসিবির মতো প্রতিষ্ঠানের লোকসান বেড়েছে মূলত নিম্ন আয়ের মানুষকে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে। অপরদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর লোকসান বাড়ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসর সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আর্থিক খাতের কিছু প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে চলছে, যা বাজেটে উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করছে। সরকারের উচিত লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি লোকসানের কারণ পর্যালোচনা করে, লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া। সময়মতো উদ্যোগ নিতে না পারলে এসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক খাতে বড় ধরনের বোঝা তৈরি করবে।

সর্বশেষ খবর