শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

শেয়ারবাজার এখন খুবই দুর্বল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজার এখন খুবই দুর্বল

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জন করে শুধু একটি পতাকা ও জাতীয় সংগীত পেয়েছি আমরা। কারণ এর ভিতরের অন্য পিলারগুলো খুবই দুর্বল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘স্টক মার্কেট’ নামের একটি পিলার আছে। এ পিলারটি এখনো খুবই দুর্বল। পার্শ্ববর্তী দেশের পুঁজিবাজারের সেনসেক্স বেড়ে অনন্য উচ্চতায় উঠেছে।

আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট পরবর্তী’ এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।

‘অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সভায় ইআরএফ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

সালেহউদ্দিন আরও বলেন, দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না। দেশের মানুষই দেশে বিনিয়োগ করছে না। তারা বিদেশে টাকা পাচার করছে। সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। যার ফলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী নন। আবার অসৎরা দেশ থেকে টাকা পাচারও করে দিচ্ছে।

অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলা হচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা মুনাফা যদি বিদেশে না নিয়ে যেতে পারেন তাহলে তারা বিনিয়োগ করবেন না। দেশের শিল্পের দেখাশোনা করার জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই। একজন শিল্পমন্ত্রী আছেন তিনি সরকারি শিল্পকারখানা দেখেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আছে, সেখানকার মন্ত্রী বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য দেখেন। দেশের শিল্প দেখবে এমন মন্ত্রণালয় দেশে নেই।

অধ্যাপক এনামুল হক আরও বলেন, যত ধনী লোক আছে সবাই বিদেশে চলে যেতে চায়। শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশে ব্যবসা করে বিদেশে গিয়ে সেরা ধনী লোক হয়ে বসে আছে। তার মানে হলো, তারাও দেশে থাকতে চাইছে না। এটা রোধ করতে হলে অর্থনীতিকে রিফর্ম করতে হবে। অর্থনীতিকে রিফর্ম না করলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। ব্যাংক এখন কাজ করছে না। ব্যাংক এখন কয়েকজন মানুষের হাতের মুঠোয়। ব্যাংক খেলাপি নামের যে শব্দগুলো শুনছেন এগুলো গৎবাঁধা শব্দ। এগুলোর কোনো পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ না ব্যাংকিং খ্যাত রিফর্ম না হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া হয় ব্যবসা করার জন্য। এখন যেটা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগ আশা করা যায় না। নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন, আশা করেছিলাম এই বিষয়গুলো সম্পর্কে দিকনির্দেশনা থাকবে। কিন্তু সেটা পাওয়া যায়নি। ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধে বলেন, দুই বছরে সামষ্টিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেশে এখন ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি চলমান। আর আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী এক মাসের মধ্যে এটা অর্জন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আগামী অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। চলতি বছরের ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ। এক মাসের মধ্যে ৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব নয়। একইভাবে আগামী অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ; বর্তমানে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বিরাজমান। এক-দুই মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হবে না উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কয়েক বছর আগে অর্থনীতির সূচকগুলো শক্ত অবস্থানে শক্তিশালী ছিল। সেই ধারণা থেকে এবার বাজেট উপস্থাপন হয়েছে, যা কোনোভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

সর্বশেষ খবর