শিরোনাম
শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদের আগে অস্থির বাজার

♦ পর্যাপ্ত মসলা আমদানি, তবু দাম দ্বিগুণ ♦ কাঁচা মরিচের ডাবল সেঞ্চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের আগে অস্থির বাজার

কোরবানির ঠিক আগমুহূর্তে বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মসলার দাম। পর্যাপ্ত পরিমাণ মসলা আমদানি থাকলেও গত বছরের তুলনায় দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আদা, রসুন, পিঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের দাম ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। আর ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা চলছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মসলার দাম বাড়ায় সবচেয়ে এগিয়ে এলাচ। মানভেদে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩,৫০০-৪,২০০ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, গত বছর কোরবানির আগে ছোট এলাচের দাম ছিল ১,৬০০ থেকে ২,৮০০ টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ২ গুণের মতো বেড়েছে। বাজারে দারচিনির কেজি ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা। এক মাস আগেও যা কেজিতে ৫০ টাকা কম ছিল। আর গত বছর কোরবানির আগে দারচিনি বিক্রি হয়েছিল ৪৬০-৫২০ টাকা কেজি দরে। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১,৭৬০-২,০০০ টাকায়। গত কোরবানির আগে এর দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কম ছিল। ধনের কেজি এখন ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। বছরখানেক আগে যা ছিল ১৩০-১৬০। প্রতি কেজি তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা। এক মাসে এ পণ্যের দাম ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। গত বছর এ সময় তেজপাতার দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এ ছাড়া জয়ত্রি ৪,০০০, জায়ফল ১,৫০০, কাজুবাদাম ১,২০০-১,৪০০ ও কাঠবাদাম ১,০০০-১,২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে এ পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।

বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে আদা, রসুন, পিঁয়াজ। পিঁয়াজ গত সপ্তাহে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা। আদা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে মানভেদে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ২০০ থেকে ২২০ আর আমদানি রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের কেজি ২০০-২৫০, কচুর মুখি ৮০, বেগুন ৫০-৬০, করলা ৬০, পটোল ৪০, ঢ্যাঁড়স ৪০, বরবটি ৮০, পেঁপে ৬০, ধুন্দল ৫০-৬০, চিচিঙ্গা ৬০, কচুর লতি ৮০, ঝিঙা ৭০ ও শজনে ১৬০ আর প্রতিটি লাউ ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবারহ চেইন ঠিক থাকলেও স্বস্তি নেই মসলাজাতীয় পণ্যের বাজারে। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে কয়েক মাসের ব্যবধানে মসলার দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ গুণ। যদিও আমদানিকারকদের দাবি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বুকিং রেট বৃদ্ধিসহ নানান কারণে দফায় দফায় বেড়েছে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘কোরবানি ঈদ সামনে রেখে পর্যাপ্ত মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। খাতুনগঞ্জে মসলার কোনো সংকট নেই। গত বছরের চেয়ে এবার বেচাকেনা কম। তাই অনেক ব্যবসায়ীকে লোকসান গুনতে হবে।’ চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর কোরবানি সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করেন চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৩ টন মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, দারচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রি, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করেন আমদানিকারকরা। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ হাজার টন বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৩ টন। জানা যায়, দেশের অন্যতম পাইকারি বাজারে মসলাজাতীয় পণ্যের রয়েছে পর্যাপ্ত মজুদ। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা তুলনামূলক কম। মসলাজাতীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বিগত কয়েক মাসের ব্যবধানে কিছু কিছু মসলার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছরের অক্টোবরে এলাকায় এলাচ ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৩ গুণ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে গুয়েতেমালার এলাচের কেজি ২,৯০০, ভারতের এলাচ ৩,৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডাল-চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করা ডাল-চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ আর ভিয়েতনামের ডাল-চিনি ৪৫০ টাকা। অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে ভারতীয় জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ আর তুরস্কের জিরা ৮০০ টাকা। মিষ্টি জিরা ১৫০ টাকা। লবঙ্গ ১,৩৫০, হলুদ ২৭০, কিশমিশ ৪৯০, রসুন ১৭৫ ও পিঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মসলাজাতীয় পণ্যের এমন মূল্যবৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক ও দেশীয় অবস্থাকে দায়ী করছেন আমদানিকারকরা। তাঁদের মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে ডলার কিনতে বাধ্য হওয়া, প্রত্যাশিত এলসি করতে না পারা, রপ্তানিকারক দেশগুলোয় বুকিং রেট বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে এর দাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর