শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্রেতার চেয়ে গরু বেশি

♦ ছোট মাঝারি গরুতে নজর ক্রেতাদের ♦ ঢাকায় ক্রেতারা ঘুরে দেখছেন, প্রত্যন্ত গ্রামে জমজমাট হাট

ওয়াজেদ হীরা

ক্রেতার চেয়ে গরু বেশি

ছবি : জয়ীতা রায়

একদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। রাজধানীর অনেক পশুর হাট এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে সারা দেশ থেকে খামারি ও পাইকারি বিক্রেতারা হাটে তুলেছেন কোরবানির পশু। রাজধানীর স্থায়ী অস্থায়ী সব হাট ভরে গেছে পশুতে। পশুর হাটে ক্রেতার চেয়ে বেশি গরুই বেশি দেখা গেছে। যদিও দাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এদিকে পশুর হাটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমেও বেচাকেনা চলছে। অনলাইনে পশু ক্রয়ে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফার্মেও চলছে বেচাকেনা। এ বছর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে ২০টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। গতকাল রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাট, হাজারীবাগের হাট, উত্তরা দিয়াবাড়ীর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের হাট ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর গরু আমদানি রয়েছে হাটে। প্রতিদিনই শত শত পশুবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে হাটে। তবে সে তুলনায় ক্রেতা খুব একটা দেখা যায়নি। বিক্রিও সেভাবে হচ্ছে না।

উত্তরার হাটে পাবনা থেকে আসা বিক্রেতা জুলহাস উদ্দিন বলেন, ১৮টা গরু এনেছি, মাত্র একটা গরু বিক্রি করেছি। তবে ঢাকায় ঈদের বাজার শেষের এক দুদিন জমজমাট হয়। হাটের অন্যান্য গরু বিক্রেতাদের দেখা যায় গরুর যত্ন নিচ্ছেন। কেউ একে অন্যের সঙ্গে খোশগল্প করছেন। বিভিন্ন হাটে ক্রেতা কম দেখে জানাতে চাইলে হাটসংশ্লিষ্টরা জানান, সময় যেহেতু আছে তাই ছুটির দিনে কম থাকতে পারে। আর দিনের বেলায় একটু কমই ক্রেতা থাকে। বেশির ভাগ ক্রেতা বিকাল থেকে সন্ধ্যায় ভিড় জমায়।

হাজারীবাগ হাটে দেখা যায় বসে বসে অলস সময় পার করছেন বেপারিরা। আজ শনিবার রাত থেকে জমজমাট হবে হাটের বিক্রি সে প্রত্যশাও তাদের। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হাট ইজারা সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ঢাকায় যারা কোরবানি দেন; গরু লালনপালনের একটা সমস্যা মনে করে ঈদের এক দিন আগে বা আগের রাতে কেনেন বেশি। শনিবার ও রবিবার রাত-দিন সমানতালে জমজমাট বিক্রি হবে- বলেন তিনি। গাবতলীর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। তবে দাম নিয়ে হতাশ ক্রেতারা। লাখ টাকার বাজেটে কাক্সিক্ষত গরু মেলাতে পারছে না। ক্রেতারা অভিযোগ তুলে বলেন, বেশি দাম চাচ্ছেন। ধানমন্ডি থেকে গরু কিনতে আসা হাছান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক লাখ টাকা বাজেট করে এসেছি। যতগুলো ছোট আকারের গরু দাম করেছি সবগুলো ১ লাখ ২০ বা ৩০ হাজার চাচ্ছে। গত বছর যে সাইজের গরু কিনেছি ৮৫ হাজারে সেটি দামই চাচ্ছে ৩০ হাজার বেশি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চলতি বছর কোরবানির চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৩ লাখ বেশি গবাদি পশু রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দাম কিছুটা কম থাকবে বলে ক্রেতারা প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে গরুর খাবার, পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বেড়েছে- বলছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর সংখ্যা বেশি। বড় গরুর সামনে ক্রেতাদের চেয়ে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকছে। হাটে ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে গরু কেনা ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। তবে ৫ লাখ থেকে ২০, ৩০ লাখ টাকা দাম হাঁকাতে দেখা গেছে ব্যাপারিদের। পল্লবীর বাসিন্দা শরিফুল আলম বলেন, তিন ঘণ্টা ঘুরেও বাজেটের মধ্যে গরু পাইনি। তিনজনে মিলে দেড় লাখের মধ্যে খুঁজছি। কিন্তু যেমন আকৃতির পাচ্ছি সেটি দাম বেশি মনে হচ্ছে। পরে কিনব। ব্যাপারিরা গরুর দাম ধরে রেখেছে, শেষের দিকে দাম ছাড়তে পারে। এদিকে বড় গরুর দাম কম এমন কথা বলছেন বেপারিরা। কুষ্টিয়া থেকে তেজগাঁও হাটে আসা রহমত মিয়া বলেন, পাঁচটি গরুর সবগুলো বড়। ছোট দুটি বিক্রি করেছি। বড়গুলো ১০ লাখ টাকার ওপরে দাম। বড় গরু ক্রেতা হাটে এখনো পাইনি। যারা এসেছে দাম শুনে চলে গেছে, কেউ কেনা দামের চেয়ে দেড় ২ লাখ কমও বলেছে। ভালো দাম না পেলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে খাসির দাম আকারভেদে সর্বনিম্ন ৬ হাজার থেকে লাখ টাকার ওপরেও রয়েছে। অনেকে লাখ টাকার খাসি দেখতেও ভিড় করছেন। কেউ আগেভাগেই কিনে নিচ্ছেন। রাজধানীর হাটের বাইরেও ঘুরে ঘুরে ফেরি করে খাসি বিক্রি করছেন অনেকে।

অনলাইনে চলছে বিক্রি : কভিড-১৯ মহামারির পর থেকে অনলাইন গরু কেনাবেচার হাটগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রেতাদের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে পশুর ছবি। এ ছাড়াও গরু বিক্রির জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। পল্লী কোরবানির হাট, বেঙ্গল মিট, গরুর হাট, বিক্রয়ডটকমসহ নানা নামে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে বেশ। ঈদের কয়েক দিন আগে কিংবা ক্রেতার পছন্দমতো সময়ে কোরবানির পশু বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে অনলাইনে হাট বসিয়েছে ই-কমার্স সাইটগুলো। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য পশুর বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রং, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানও দেওয়া থাকছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমে উঠেছে। অনেক ক্রেতা হাটের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন খামারের পশু কেনার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে বেপারিদের কাছ থেকে ইজারাদারদের বাড়তি টাকা আদায়, সড়ক ও অলিগলিতে পশুর হাট বসানো, খুঁটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন হাটের নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম নগর ও জেলা মিলিয়ে এবারের কোরবানির ঈদের পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৮৫ হাজার। এর মধ্যে অন্তত অর্ধেক পশুর চাহিদা মেটাচ্ছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি খামারগুলো। বাকি পশুগুলোর বেশির ভাগই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে। ভারত ও মিয়ানমার থেকে বৈধ অবৈধ পথেও কিছু গরু চট্টগ্রামের বাজারে আসছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, নগরীতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে এবার ১০টি পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জমে উঠেছে বগুড়ার পশুর হাটগুলো। ছোট ও মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি এ জেলায়। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও এবার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতারা পছন্দের পশু ক্রয় করতে বিভিন্ন হাট ঘুরছেন। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে খরচ বেড়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির জন্য জেলায় ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন খামারি ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এসব পশু এবার বগুড়া জেলায় চাহিদা পূরণ করেও ২৯ হাজার ১৫৫টি উদ্বৃত্ত থাকবে। বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত হাসিলের অতিরিক্ত কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না। প্রতিটি হাটেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে সদর উপজেলার খাটোপাড়া গ্রামের প্রান্তিক খামারি মফেল ভুইয়া ‘রাজা বাবু’ নামের এক বিশাল গরু তৈরি করেছেন যা গত বছর কোরবানির ঈদে দাম হাঁকানো হয় ৩০ লাখ টাকা। তবে ন্যায্য দাম না পেয়ে বিক্রি করতে পারেননি। গরুটির ওজন এখন প্রায় ৪০ মণ বলে দাবি মফেল ভুঁইয়ার। বিশাল আকৃতির রাজা বাবুকে দেখতে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভিড় করেন বাড়িতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর