শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নতুন কৌশলে সক্রিয় জাল টাকা চক্র

মাহবুব মমতাজী

নতুন কৌশলে সক্রিয় জাল টাকা চক্র

রাজধানীসহ সারা দেশে নতুন কৌশলে সক্রিয় হয়েছে জাল নোটের চক্র। আসন্ন কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে তারা ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের পাশাপাশি ২০ ও ৫০ টাকার জাল নোটও ছড়িয়ে দিচ্ছে। চক্রগুলো ১ লাখ জাল নোট বিক্রি করছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। আর ছড়িয়ে পড়া এসব জাল নোটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও হাসপাতালের রোগীর স্বজনরাও। তাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে এক ধরনের আতঙ্ক।

গত ৯ জুন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের গেট এলাকা থেকে জাল টাকাসহ শাকিল মিয়া (২২) নামে এক যুবককে আটকও করেন আনসার সদস্যরা। ঢামেক হাসপাতালের আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মিজানুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ৮টায় ঢামেকের বাগান গেট এলাকা থেকে শাকিলকে ১ হাজার টাকার দুটি নোটসহ আটক করে পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। ফারিজ নামে এক রোগীর স্বজনকে ১০০০ টাকার একটি নোট দিয়ে ভাঙতি চান। তখন ওই নোটটি হাতে নিয়ে ফারিজ বুঝতে পারেন এটি জাল নোট।

৮ জুন রাজধানীর কদমতলীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি বাসায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। এ সময় লিয়াকত হোসেন জাকির ওরফে মাজার জাকির ওরফে গুরু জাকির (৪০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম (২৫), লিমা আক্তার রিনা (৪০) ও সাজেদা আক্তারকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। ডিবি বলছে, বাজারে পাওয়া ২২ এমএম সাদা কাগজ কালার প্রিন্টারে দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জাল টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা তৈরি করে আসছিল চক্রটি। চক্রের হোতা জাকির ১২ বছর ধরে ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করে আসছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেন সন্দেহ করতে না পারেন সেজন্য বর্তমানে ১০০ ও ২০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতেন। ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই অভিযানের পর ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানিয়েছিলেন, ২৫ বছর ধরে জাল টাকার খুচরা ও পাইকারি কারবার করার পাশাপাশি বিভিন্ন মানের জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ লিয়াকত হোসেন জাকির। তিনি ২০১২ সাল থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করলেও বর্তমানে সাধারণ মানুষ যেন সন্দেহ করতে না পারেন সেজন্য বড় নোটের পাশাপাশি ১০০ ও ২০০ টাকার জাল নোটও তৈরি করতেন। বর্তমানে কাগজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের কালি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাকির ১০০০ টাকার ১০০টি নোটের বান্ডেল ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। গত ১২ বছরে জাকির কখনো জাল টাকা খুচরায় বিক্রি করেননি। নারী-পুরুষ মিলে তার প্রায় ১৫-২০ জন কর্মচারী আছে, যাদের মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন দিতেন। তারা ব্যক্তি পর্যায়ে জাল টাকা বিক্রি করলে ধরা পড়তে পারেন, সেই ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে (বিশেষত ফেসবুক ও মেসেঞ্জার) দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে জাল নোট বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন। ডিবি বলছে, শুধু ঈদ নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসবমুখর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আগেও মার্কেটে কেনাকাটার সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিক্রেতাদের এসব জাল মুদ্রা গছিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি উৎসবের আগমুহূর্তে জাল নোট তৈরির চক্রগুলোর জাল টাকা নিখুঁত করার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা চলে।

গত ২৭ মার্চ রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দুর্গম চরমোহনসহ আশপাশে অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট ও জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার আরিফ ব্যাপারী (২০) ফটোকপি দোকানের কর্মচারী। প্রথমে নিজের আয়ের টাকায় জাল টাকা তৈরির মেশিন কেনেন। এরপর রাজমিস্ত্রি অনিক ও পদ্মা নদীর জেলে জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন জাল টাকা তৈরির চেষ্টা। ইউটিউব দেখে দেখে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হন তারা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে কম দামে জাল টাকা বিক্রির পোস্ট দিয়ে সংগ্রহ করেন ক্রেতা। সাত-আট দিন আগে তারা ১২ লাখ টাকার একটি জাল নোটের চালান সরবরাহ করেন। এখান থেকে তারা আয় করেন দেড় লাখ টাকা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমাদের অধিক নজরদারি রয়েছে এবং অভিযানও বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর