বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদের ছুটিতেও নানা অপরাধ

সিলেটে অপহরণকারীদের হাতে যুবক নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আজহার আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন এবং টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুর, কক্সবাজার, মানিকগঞ্জ ও নোয়াখালীতে এসব ঘটে। ঈদের দিন সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আজমত আলী ফিলিং স্টেশনে হামলা করে নগদ ৭ লাখ টাকা লুট ও কর্মকর্তাদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা দুজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত ওই দুজন হলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই গ্রামের সরু মিয়া (৫০) ও মামুন (৩০)। এদের হামলায় ফিলিং স্টেশনের মালিক শফিউদ্দিন আহমেদ, তার ভাতিজা রাতুল ও কর্মচারী আরশাদ হোসেন মনোয়ার আহত হয়েছেন। তাদের কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শফিউদ্দিন আহমেদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন।

শফিউদ্দিন আহমেদ জানান, ঈদের দিন সন্ধ্যায় সুর মিয়া, মামুন, রাহাতসহ তাদের সহযোগী পাঁচ-ছয় জন দুষ্কৃতকারী মোটরসাইকেলে এসে ফিলিং স্টেশনে আকস্মিক হামলা করে লুটপাট চালায়। তার ভাতিজা রাতুল বাধা দিলে হামলাকারীরা তাকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এদিকে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাসায় আসার পথে দুষ্কৃতকারীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন গাজীপুর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম (৫২)। তিনি মানিকগঞ্জ শহরের গঙ্গাধরপট্টি এলাকায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শহিদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার বাজন দারগাতী এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। সোমবার সকাল ৬টায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর এলাকায় ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশের ৪ নম্বর পিলারের কাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানা গেছে, শহিদুল ইসলাম রবিবার রাতে কর্মস্থল থেকে মানিকগঞ্জের বাসার উদ্দেশে রওনা হন। ১১টায় পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয়। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশ জানায়, স্থানীয় এক কৃষক সোমবার সকাল ৮টায় ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশের ৪ নম্বর পিলারের কাছে একটি অজ্ঞাত লাশ দেখতে পেয়ে গ্রামপুলিশকে জানান। ওই গ্রামপুলিশ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি জানালে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। গতকাল ভোরে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের উপরেরখিল এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন একই এলাকার কামাল হোসেনের মেয়ে রুবি আক্তার (১৯) ও তার স্বামী নুর মোহাম্মদ (২৮)। নুর মোহাম্মদ চট্টগ্রামের রাউজান এলাকার বাসিন্দা। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, মঙ্গলবার রাত ২টা-৩টার দিকে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। কারা কেন এ হত্যা করেছে বিষয়টি পরিষ্কার না। ঘটনার ক্লু বের করার চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার রাত ৮টায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কামলারটেক বাজারে নাম ধরে ডাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের ছুরিকাঘাতে জাহিদুল ইসলাম (২০) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় মনির হোসেন (১৮) নামে আরও একজন আহত হয়েছেন। জানা গেছে, জাহিদুল পশ্চিম কুতুবপুর গ্রামের ওয়ারিশ হাজিবাড়ির হারুনুর রশীদ ওরফে কালা মিয়ার ছেলে। তিনি ঢাকার একটি ব্যাগ তৈরির কারখানায় চাকরি করতেন। এ ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে একই গ্রামের হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য রিয়াজকে (২০) আটক করে পুলিশে দেয়। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তারা পরস্পর বন্ধু ছিল। তাদের বাড়িও পাশাপাশি। নিহত জাহিদুল আসামি রিয়াজকে নাম ধরে ডাকেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করলে জাহিদুল ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সিলেটে অপহরণকারীদের হাতে যুবক নিহত : সিলেটে অপহরণকারীদের মারধরে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরেকজন। সিএনজি অটোরিকশায় থাকা ছদ্মবেশী অপহরণকারী চক্র তাদের দুজনকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের। গত মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে সিলেট নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবুল হাসান (২৯) নামের ওই যুবক মারা যান। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে চাচাতো ভাইসহ আবুল হাসান অপহৃত হন। নিহত আবুল হাসান গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর এলাকার পূর্বভাগ কলাশহর গ্রামের মৃত ইলিয়াস আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।

নিহতের ছোট বোনের স্বামী মোস্তফা আকমল বলেন, ‘সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি আমার স্ত্রীকে দেখতে তার ভাই আবুল হাসান গোলাপগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে আসছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে তাদের এক চাচাতো ভাই ছিলেন। রাত ৮টার দিকে অটোরিকশায় ওঠার সময় আগে থেকেই দুজন যাত্রী অটোরিকশায় বসা ছিলেন। ভাদেশ্বর থেকে গোলাপগঞ্জ আসার পর ওই দুই যাত্রী নেমে যান এবং আরও দুই যাত্রী ওঠেন। দক্ষিণ সুরমা ওভারব্রিজের কাছে আসার পর অটোরিকশায় ওঠেন আরেক যাত্রী। এরপর আমার স্ত্রীর বড়ভাই ও সঙ্গে থাকা তাদের চাচাতো ভাই অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তারা নিজেদেরকে একটি ভবনের ছাদের ওপর দেখতে পান। এ সময় ৪-৫ জন যুবক তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে এবং ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রীর বড়ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে অপহরণকারীরা তাদেরকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমার স্ত্রীর ভাইকে স্থানান্তর করা হয়। রাত ১টার দিকে তিনি হাসপাতালে মারা যান।’ মোস্তফা আকমল জানান, অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মাছুদুল আমিন জানান, অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি যেহেতু সিলেট শহরে ঘটেছে তাই গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা নেওয়ার সুযোগ নেই। নিহতের স্বজনদের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর