শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোগান্তিতে ৬ লাখ নাগরিক

গোলাম রাব্বানী

ভোগান্তিতে ৬ লাখ নাগরিক

জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংশোধন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ৬ লাখ নাগরিক। তাদের সংশোধনীর আবেদন নির্বাচন কমিশনে ঝুলে আছে। এ কারণে সরকারি ও বেসরকারি সেবাগ্রহণ; চাকরির আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করাসহ অনেক কাজই তাদের আটকা রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন তিন-চার বছরও ঝুলে আছে অনেক নাগরিকের।

নাগরিকদের অভিযোগ- সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে। টাকা বা তদবির ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন যেমন মেলে না, তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হওয়ার জন্য ঘুরতে হয় অফিসে অফিসে। আবার যারা দেশে বসবাস করেন তারা চাইলেও সহজে ভোটার হতে পারেন না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আইন রয়েছে কিন্তু সে আইন অনুযায়ী কাগজপত্র দিয়ে সংশোধন মিলছে না। বড় সংশোধনের জন্য প্রথমে উপজেলা নির্বাচন অফিসের একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন হয়। আর তদন্ত প্রতিবেদন টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। টাকা না দিলে সংশোধনের আবেদন ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। ইসি সূত্র জানিয়েছে, সব মিলে বর্তমানে ৬ লাখেরও বেশি আবেদন রয়েছে। এক্ষেত্রে এনআইডি সংশোধনের অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১। প্রক্রিয়াধীন আবেদনের সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৩। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এনআইডি সংশোধন দ্রুত করতে সংশোধন ক্যাটাগরি ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। অনলাইনে দাখিলকৃত আবেদনের ক্যাটাগরি সম্পন্ন করতে পাঁচ কার্যদিবস এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমাতে সহায়তা করবে।

ভোটার হতে তিন দফতরে দৌড়ঝাঁপ

বর্তমানে নতুন ভোটার হতে গেলে তিন দফতরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। সিটি করপোরেশনে কেউ ভোটার হতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন হয় সিটির সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সনদ ও ভোটার ফরমে কাউন্সিলরের স্বাক্ষর। এরপর প্রয়োজন হয় যে বাসায় ভাড়া থাকেন সে বাসার কর পরিশোধের কাগজ, ভাড়া চুক্তিপত্র, বাসার যে কোনো বিলের কপি। এরপর নতুন ভোটার হতে প্রয়োজন হয় জন্মনিবন্ধন সনদের। এ জন্য তাকে যেতে হয় জন্মনিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট অফিসে। সব মিলে দেশে বসবাস করেও কেউ চাইলেই সহজে ভোটার হতে পারেন না। কিন্তু ভোটার না হলে কারও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার সুযোগ নেই। আর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, নতুন পাসপোর্ট করাসহ নানা ধরনের সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা।

ভোটারের যত ভোগান্তি

অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন ঝুলে আছে ইসিতে। জেলা-উপজেলা অফিসে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তারা। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন কপি জমা না দিতে পারায় তাদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন ভোটারদের সংশোধনের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা নেই। তবে যারা আগে ভোটার হয়েছেন তাদের অনেকেই বয়স ও নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখেই আমরা সেগুলো সংশোধন করছি।

ভোটার হওয়ার ভোগান্তিতে প্রবাসীরা

দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোটার নিবন্ধন, সংশোধনের কাজ স্বল্প সময়ে শেষ করার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে চিঠি দিয়ে প্রবাসীদের স্পেশাল সার্ভিস দেওয়ার জন্য বলা আছে। এখন প্রবাসীদের প্রথমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে আবেদনের ভিত্তিতে ছবি তুলে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনসহ আপলোড করলে কাজটি সম্পন্ন হয়। তবে এসব কাজ করতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোয় গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। মাসের পর মাস গেলেও সেখান থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয় না। ফলে পরিচয়পত্র পাওয়া যায় না। অল্প সময়ের জন্য দেশে এলেও শুধু এ পরিচয়পত্রের কাজেই প্রায় পুরো সময় চলে যায়।

এনআইডি সেবায় হয়রানি বন্ধের নির্দেশ সিইসির

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা প্রদানে নাগরিকদের হয়রানি, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ ছাড়া সময়মতো সেবাদানেরও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত এক কর্মশালায় তিনি এমন নির্দেশনা দেন।

সিইসি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এনআইডির গুরুত্ব এখন অপরিসীম। আমাদের ভোটার তালিকাও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাইজ হয়ে গেছে। এনআইডি এখনো শতভাগ সেটেলড ডাউন হয়েছে এটা আমার কাছে মনে হয় না। অনেকে কমপ্লেইন করেন যে, পরিবর্তন, সংশোধন করতে হবে। আবার সংশোধনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা আবেদনকারী তাদের কারণে ভুল হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্যগুলো যখন লিখছে, তখন সঠিকভাবে লিখছে না। তবে কিছু সংকট আমাদেরও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর