শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
চিনিতে সয়লাব সীমান্ত

বুঙ্গার কারবারে লাইন দিয়ে কোটিপতি দুই মিলন খান

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

লাউড়েরগড় থেকে বাঁশতলা, প্রায় ৩০ কিলোমিটার সীমান্ত এখন চোরাচালানের অভয়ারণ্য। তাহিরপুরের বাদাঘাট, বিশ্বম্ভরপুরের ধনপুর, সদরের জাহাঙ্গীরনগর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বোগলাবাজার ও বাংলাবাজার  ইউনিয়নজুড়ে এই বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা। যেখানে রয়েছে তিনটি সীমন্ত হাট- লাউড়েরগড়, ডলুর ও বাগানবাড়ি। কৌশলগত কারণে সীমান্ত চোরাচালানের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হয় বিশ্বম্ভরপুরের ধরনপুর ও দোয়ারাবাজারের বোগলাবাজার ইউনিয়ন থেকে। এ চোরাকারবারকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হয় ‘বুঙ্গার কারবার’। ‘বুঙ্গার কারবার’-এর ‘নিরাপত্তা’ দিয়ে যে ‘লাইন মানি’ তোলা হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণ করেন দুই ইউপি চেয়ারম্যান। তাদের দুজনেরই নাম মিলন খান- একজন বোগলাবাজার ও অন্যজন ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পৌনে দুই বছর ধরে প্রায় অবাধে চলা ‘বুঙ্গার কারবার’ নিয়ন্ত্রণ করে তারা কোটিপতি। তবে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বিজয়ী হওয়ায় ধনপুরের মিলন খানের নিয়ন্ত্রণে ভাটা পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, কাঁচা পয়সার লোভে চোরাকারবারে যুক্ত হয়ে পড়ছেন সীমান্তবর্তী এলাকার যুব সমাজসহ সাধারণ মানুষ। চিনি, পেঁয়াজসহ খাদ্যসামগ্রী আর প্রসাধনীর ফাঁক দিয়ে মাদকও ঢুকছে। বড় বড় ট্রাক, কাভার্ডভ্যান আর পিকআপ বোঝাই করে আর কুরিয়ার সার্ভিসেও দেশে নানা প্রান্তে চলে যাচ্ছে এসব অবৈধ পণ্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দোয়ারাবাজারের সীমান্ত এলাকার চোরাচালানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিলন খানের হাতে। বাগানবাড়ি সীমান্ত হাট থেকে শুরু করে সীমান্তের নানা পয়েন্ট দিয়ে আসা ভারতীয় পণ্যের ‘নিরাপত্তার’ দায়িত্ব এই ইউপি চেয়ারম্যানের। বিনিময়ে মালের প্রকৃতি ও মূল্যভেদে ‘লাইন মানি’ উত্তোলন করেন তার ভাই ইকবাল খান। এই ‘লাইন মানি’র টাকা ভাগবাটোয়রা হয় বিভিন্ন সেক্টরে। সীমান্ত পেরিয়ে এক বস্তা চিনি আসলে ‘লাইন মানি’ দিতে হয় ৩০০ টাকা। একটি কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাক অবৈধ পণ্যে বোঝাই করা হলে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হয় ‘লাইন মানি’। অভিযোগের ব্যাপারে মিলন খান বলেন, ছাত্রজীবন থেকে এ পর্যন্ত আমি কখনো বুঙ্গার কারবারে জড়িত ছিলাম না। আমার নামে মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগ রটানো হচ্ছে। আমি সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারার সঙ্গে যুক্ত। এখানে অবৈধ কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে, জেলার চোরাকারবারের অপর একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ হয় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়ন থেকে। উপজেলা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ইউনিয়নের চিনাকান্দি এলাকার ক্যাম্পেরবাজার থেকে এর নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খান। কিন্তু বিগত উপজেলা নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এই নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। এখন সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবলীগ নেতা ‘লাইন’ নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলার চান্দেরবাজার থেকে।

ধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খান বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করি। কোনো চোরাকারবারের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। দেশের বাজারে পেঁয়াজ ও চিনির দামের তুলনায় ভারতের বাজারে প্রায় অর্ধেক। ফলে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠে চোরাই সিন্ডিকেট। সীমান্তের অন্তত ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে আসে ভারতীয় পণ্য। চোরাই মালামাল সীমান্তবর্তী বাসাবাড়িতে জমা করে পিকআপ, অটোরিকশা যোগে নিয়ে আসা হয় সীমান্তের অদূরে চিনাকান্দি, ধনপুর, শরিফগঞ্জ, লাউড়েরগড়, মাছিমপুর ও পলাশ বাজার, বোগলাবাজার, বাংলাবাজার এলাকায়। সীমান্ত থেকে নিয়ে আসার পথে প্রতিটি যানবাহনের কাছ থেকে আদায় করা হয় মালের অনুপাতে টাকা। পরবর্তীতে পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সর্বশেষ খবর