শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
শঙ্কা কাটেনি ১৪-দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে

জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সরব হচ্ছে শরিকরা

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪- দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা কাটেনি শরিক দলগুলোর। জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরও সরেনি জোটের আকাশে জমাট বাঁধা কালো মেঘ। জোট এবং সরকার দুই জায়গাতেই এখনো নিজেদের অপাঙ্ক্তেয় বোধ করছে শরিক দলগুলো। নিজেদের হারানো মর্যাদা ফিরে পেতে তাই সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়ে উঠেছে শরিকরা। শরিক দলের নেতাদের বক্তব্য আর কর্মসূচিতে প্রাধান্য পাচ্ছে সরকার গৃহীত বিভিন্ন নীতির সমালোচনা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদেশে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার বিষয়ক নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব হয়ে উঠছে জোটভুক্ত দলগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৪ দলীয় জোট এক নতুন মেরুকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট শরিকদের ভরাডুবি হয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে তারা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। শরিকদের এখনই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জোটের ইতিহাসে এবারই প্রথম জোট নেতাদের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থ পাচার রোধ, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাতের দুষ্কর্মের হোতাদের বিচারের দাবিতে আগামী ২৫ জুন দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বামপন্থি সমমনা দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য। গত ১০ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে ওয়ার্কার্স পার্টি। প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করেছে জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। গত ৯ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৪ দলীয় জোটের যে সব অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে সেগুলো সমাধান করতে ঈদের পর জোটের সিরিজ বৈঠক হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। বৈঠক থেকে জোটের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচির পথনকশা তৈরি হবে। জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদের ছুটি শেষে সাংগঠনিক সফর, কর্মিসভার মধ্য দিয়ে দল পুনর্গঠনেও মনোযোগী হবে জাসদ। ১৪ দলীয় জোট সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ২৩ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিকে জোটের ‘ভাগ্য নির্ধারণী’ বৈঠক হিসেবে বিবেচনা করেছিল শরিকেরা। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছেন। তবে শেষমেশ বৈঠক থেকে বলার মতো বড় কোনো অর্জন দেখেননি তারা।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৪ দলীয় জোটের ভূমিকা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। তবে জোটের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা এত দ্রুত কেটে যাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য সময় প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে ভিত্তি করে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে উঠে ১৪ দলীয় জোট। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে এ জোট। দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করা এই জোটের শরিক দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। এর মধ্যে তিনটি দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। এ দলগুলো  হলো- গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। শরিকদের মধ্য থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চারজন, দশম সংসদে সংরক্ষিত দুজনসহ ১৩ জন, একাদশ সংসদে আটজন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত জোটের কার্যক্রমে একধরনের সক্রিয়তা ছিল। এরপর থেকেই ক্রমে দূরত্ব তৈরি হয়। যার ফলাফল দেখা গেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ছয়টি আসনে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে শুধু ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন জয় পেয়েছেন। মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি তাদের কারোরই।

সর্বশেষ খবর